কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিহীন সনদ প্রদানের অভিযোগে নেত্রকোনা মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাইদুল ইসলাম খান ওরফে মামুন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (ইউপি-১ শাখা) উপসচিব পলি কর তাঁর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এতথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ, মো. মাইদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থে পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪)(খ)(ঘ) ধারার অভিযোগে একই আইনে ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম খানের দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে।
এরআগে মদনের মনিকা গ্রামের জিয়াউর রহমান, স্বপন মিয়া, আবুল মিয়া, কাসেম মিয়া, সোহাগ মিয়া, সাদ্দাম মিয়া, আমির হামজা, মাসুদ মিয়া, আজিজুল হক, সাইকুল, ফারুক, রাজিব, রফিকুল ইসলাম, হাদিস মিয়া, মাজহারুল ইসলাম ও আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী গ্রামের আনোয়ার হোসেন এই সকল ব্যক্তিবর্গ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের নিজস্ব ভূমি থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ভুমিহীন সার্টিফিকেট দিয়েছেন গোবিন্দশ্রী ইউপি’র চেয়ারম্যান। এছাড়াও মনিকা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের নিকট থেকে খুচরা সারের ডিলারশীপ প্রদানের কথা বলে লিখিত প্রত্যায়নের মাধ্যমে নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান।
এমন বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল মনিকার গ্রামের মো. মিজানুর রহমান (কমল) সহ ৫০ জনের স্বাক্ষরিত অভিযাগ নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে জমা পড়ে।
অভিযোগটি দাখিলের পর প্রথম দফায় শুনানি গ্রহণ করা হলেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলামে বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখে “মদনে খাস জমি উদ্ধার, ভূমিহীন সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে”, “মদনের গরিবের ত্রাণের ৪ বস্তা কম্বল পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে”, “ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সৌর প্যানেলসহ আসবাবপত্র নিয়ে গেলেন ইউপি চেয়ারম্যান” ও “তথ্য সেবা কেন্দ্রের মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে” শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং মো. মিজানুর রহমান গংসহ ৫০ জনের স্বাক্ষরিত অভিযাগ এসবের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য প্রাপ্তির জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর মনিকা গ্রামের শেখ মেহেদী হাসান পরশ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর আলোকে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
এরপর নতুনভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা মদনের সহকরি কমিশনার (ভূমি) মো. রোজোয়ান ইফতেকার দ্বিতীয় দফায় শুনানি গ্রহণ করেন। গত ২৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে প্রেরণ করা হয়।