স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
যশোর জেলার সদর,অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর,খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত ভবদহ অঞ্চলে ষাটের দশক থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এবছরও গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চলা টানা বৃষ্টিতে আবারও এ অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রামে সোচ্চার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে।
আজ বুধবার (১৮ ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জলাবদ্ধ মশিয়াহাটী কলেজ প্রাঙ্গণে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘ ৪৪ বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ভবদহ স্লুইস গেট প্রস্তাবসহ নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ এর কারণ। এই জনপদে ভবদহ স্লুইস গেট একটি মরণ ফাঁদ, এর কোনও কার্যকারিতা এবং পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতাও নেই। পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০ থেকে ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও সুগভীর নদী হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রশস্ততা ১৫ থেকে ২৫ ফুট এবং নদীও ভরাট হয়ে গেছে। গত ৪৪ বছরে সংস্কারের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ঠিকাদার চক্রের সিন্ডিকেটের লুটপাটের সুবিধার্থেই তা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জলাবদ্ধতাদূরীকরণে জনগণ উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণআন্দোলনে গৃহীত হলেও বিগত সরকার ২০১২ সালে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের উপর হামলার’ অজুহাতে বাতিল করে দেয়।
এই জনপদের ৫০-৬০টি গ্রাম ইতোমধ্যে ডুবে গেছে দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, মণিরামপুর, কেশবপুর বা অভয়নগর শুধু নয়, জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া ও যশোর শহর পর্যন্ত।
আমরা বলেছি ,যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকার ৪ শতাধিক গ্রাম আবাদ ফসল, বসত বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবরখানা, শ্মশান, ব্যবসা-বাণিজ্য পানির তলে চলে যাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারংবার স্বারকলিপি প্রদান, অনুরোধ উপরোধ করলেও লুটেরা সিন্ডিকেটের স্বার্থে আমাদের কথায় কর্ণপাত করা হয়নি। উপরন্তু দুর্গত শত শত নারী পুরুষকে লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। যে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলে আসছিলাম সে ঘটনাই ঘটে চলেছে।
নেতৃবৃন্দ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জরুরি কর্মসূচির আওতায় টিআরএম চালু,আমডাঙ্গা খাল দ্রুত সংস্কার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবসহ সিন্ডিকেটের বিচারের দাবি জানান।
উল্লিখিত দাবির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ৫ অক্টোবর ভবদহ দিবসে সারাদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির হুঁশিয়ার দেয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জনাব ইকবাল কবির জাহিদ ও আহ্বায়ক জনাব রণজিৎ বাওয়ালী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নাজিমউদ্দীন, শিবপদ বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, রাজু আহমেদ,কানু বিশ্বাস, সুকৃতি মন্ডল, পলাশ বিশ্বাস, উৎপল বিশ্বাস, মহির উদ্দিন, আজিজুর প্রমুখ।