তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি ও মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গত শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৬টায় স্থানীয় নবাবগঞ্জ বাজারে ঐক্যবদ্ধ ভূকশিমইল ইউনিয়নবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীদের উদ্যেগে অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধনে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ জাকারিয়া আলম মিতুলের পরিচালনায় একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, নবাবগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা আফজল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক আব্দুল জলিল তুলা, সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম রাজু, ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভূকশিমইল ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ বাজার এলাকাসহ আশপাশের ১০ টি গ্রামে টানা কয়েকদিন বিদ্যুৎ না থাকার কারণ জানতে চাইলে উল্টো বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক এলাকার নিরীহ ৪জনকে আসামি করে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ভূকশিমইল ইউপির নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হাসান রাজুসহ ৪ জনের উপর বিদ্যুৎ বিভাগ মিথ্যা মামলা দায়ের করে।

গত ২রা জুন বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী-প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে ভূকশিমইল গ্রামের মৃত চেরাগ মিয়ার ছেলে ও নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন (৫২), একই গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে ও বাজারের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হাসান রাজু (৩৫), বাদেভূকশিমইল গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে রবিউল ইসলাম (৪০) ও মৃত মানিক মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন (৩২) এর বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান ও মারপিটের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে গত রোববার (৭ই জুলাই) তারা আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

বক্তারা বলেন,ঘটনার সময় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। বিদ্যুৎ অফিসের গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি এলাকায় ঘটেনি। গত মে মাসের শেষের দিকে টানা ৪ দিন ভূকশিমইল ইউনিয়নের কানেহাত, ভূকশিমইল, কালেশার, জাবদা, বাদে ভূকশিমইল, শশারকান্দি, মুক্তাজিপুর গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না।

বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মাধ্যম হতে বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন নবাবগঞ্জ বাজারে আসলে এলাকার লোকজন ও বাজারের ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে জানতে চান।

তখন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন জানান, কখন বিদ্যুৎ আসবে সেটি তারা বলতে পারবেনা। ইউনিয়নের শশারকান্দি এলাকায় লাইনের ত্রুটি রয়েছে, এমনকি অফিসে জনবল সংকট তাই লাইনের কাজ করতে বিলম্ব হবে।

এসময় বাজারের লোকজন ও এলাকাবাসী বাজারের ভেতরে সেকশন করার দাবি জানান। তখন এলাকার লোকজনের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের সাথে এলাকার লোকদের বাকবিতন্ডা হয়।

পরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন বাজার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে তাদের ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করে নিজেরা শরীরে আঘাতের চিহ্ন করে এলাকার নিরীহ ৪ জনের বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

এলাকার লোকজন যদি গাড়িটি ভাঙচুর করতো তাহলে বাজারের ভেতরে ৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সেটি পর্যবেক্ষণ করলে পরিস্কারভাবে বিষয়টি বুঝা যাবে। ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান দু’পক্ষের মনমালিন্যর বিষয়টি সমাধান করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ রাজি হয়নি।

এরপর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

তারপরও কেন ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলো সেটা আমরা জানতে চাই। এরআগে গত ২৯ মে বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই আতিকুল আলম খন্দকার বলেন, প্রাথমিকভাবে মামলাটি তদন্ত করছি। পুরো তদন্তকাজ শেষে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ও মামলার বাদী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version