লোকমান হাফিজ, সিলেট:
সিলেটে অতি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। হু হু করে বাড়ছে নদনদীর পানি। ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেট এবং এর উজানে টানা ভারি বর্ষণের কারণে ফুসে উঠছে এ অঞ্চলের নদীগুলো।
বিশেষ করে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার অবস্থা অনেকটা বেসামাল প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। সিলেট শহরের অনেক এলাকার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় ভয়ে আছেন সিলেট নগরীর লোকজন।
বুধবার (২৯ মে) সারারাত ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এদিকে সিলেট সকল উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। তবে বেশি প্লাবিত হচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ।
বুধবার (২৯ মে) রিডিং অনুযায়ী সিলেটের সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ১০ দশমিক ৮০মিটার। গত রাতের বিরামহীন বৃষ্টিপাতের পর আজ সকাল ৬টার দিকে এ পয়েন্টে অনেক পানি বৃদ্ধি পায়। সুরমানদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৩ দশমিক ৭৪ মিটার যা বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬ মিলিমিটার বলে নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।
সুরমার মতোই ফুঁসছে কুশিয়ারা। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৯ দশমিক ৪৫ মিটার কিন্তু শেওলায় ১৩ দশমিক ৫ মিটার,আমলসিদ পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৪০ মিটার।সারিনদীর ডাউকি পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১২ দশমিক ৫ মিটার যা বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইউএনও শেরপুর জাহাঙ্গীর বখত জানান এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬মিলিমিটার।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। আমি নিজে বন্যা পরিস্থিতি তদারকি করছি।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেলের অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্যা দুর্গত ও ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা সমূহে জনপ্রতিনিধিগণ সহ সরেজমিনে কার্যক্রম পরিচালনা করছি সকাল থেকে। যে সকল এলাকায় ঝুঁকি পূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে সে সকল এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকান সমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করছি।
উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ৫৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবণ প্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।
হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দী। রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলার ইউ এন ও ফারজানা নাসরিন বলেন,আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি।আমি নিজে কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর পার্শ্ববর্তী ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা সহ বেশ কয়েকটি ঝুকিপূর্ণ জায়গা পরিদর্শন করেছি।দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের ১৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ -সুবিধাসহ প্রস্তুত রয়েছে।
আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের মজুত রেখেছি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবণ প্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
কানাইঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট টু বাগান সংযোগ সড়কের মন্দির,আমবাড়ি,আমরি খাল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।
হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দী।
১ও২নং ইউপির মুলাগুল বাজার,কান্দলা,মেচা,উত্তর ও দক্ষিণ লক্ষিপ্রাসাদ,কুওরগড়ীতে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, আমি সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।আমাদের চারিকাটা ও নিজপাট ইউনিয়নের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১২ টি আশ্রয়কেন্দ্র সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুত রেখেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সিলেট কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সিলেটের উপর দিয়ে গিয়ে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে, এর প্রভাবে সিলেট ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে যার দরুন সিলেটের নদীগুলোতে গত ২৪ ঘন্টায় ১৫-১৬ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি নামতে শুরু করলে এ পানি সপ্তাহখানেকের মধ্যে কমে যাবে।