প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন স্থানে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে লাখো ঘরবাড়ি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ভেসে গেছে শাকসবজিসহ নানারকম ফসল, মাছের ঘের ও গবাদিপশু। আট জেলায় পানিতে ডুবে, গাছ পড়ে, ঘর ও দেওয়ালচাপায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় চারজন, পটুয়াখালীতে তিনজন, বরিশালে দুজন এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, সাতক্ষীরা ও লক্ষীপুরে একজন করে মারা গেছেন।
ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুরে দুদিন ধরে নৌযোগাযোগ বন্ধ। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ডুবে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎহীন সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ অন্তত দশ জেলার অনেক এলাকা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার দুর্গত এলাকার মানুষ। অনেকে গৃহহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে রিমালের প্রভাবে সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকাসহ অনেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিন সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, রিমালের আঘাতে ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আংশিক এবং সম্পূর্ণ মিলে এক লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭টি এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।
মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপক‚লীয় এলাকাগুলোতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছেন। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি।