সোয়াইব আলী জবি প্রতিনিধি:
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মরণঘাতী ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধ্যাপক ড. শিল্পী খানম। বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক বোনম্যারো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এখন ভর্তি আছেন রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশাইজড হাসপাতালে। শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার রাতে তাকে নেয়া হয়েছে আইসিইউতে। এদিকে তাঁর দীর্ঘদিনের চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবার। এখন হাসপাতালের খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এই অবস্থায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সবার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে তাঁর পরিবার।
অধ্যাপক শিল্পী খানমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে বোনম্যারো ক্যান্সার ধরা পড়ে অধ্যাপক শিল্পী খানমের। এরপর দেশে কিছুদিন চিকিৎসার পর তাঁকে নেয়া হয় ভারতে। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসার পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। তবে দিনে দিনে শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। ক্যান্সার পুরো রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ক্যান্সের শেষ স্টেজে আছেন বলে ডাক্তারের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে জমানো সব টাকা শেষ হয়ে গেছে তাঁর পরিবারের। চিকিৎসা খরচ চালাতে করেছেন ঋণও। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এর আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসা চালাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন তার পরিবার। বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি রয়েছেন অধ্যাপক শিল্পী খানম। সেখানে শনিবার পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকা বিল আসলেও আর্থিক সংকটের কারণে সেটিও পরিশোধ করতে পারছেনা তার পরিবার। চিকিৎসা খরচ চালিয়ে নেওয়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
অধ্যাপক শিল্পী খান্মের স্বামী কাজী শফিকুল ইসলাম আগে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতেন। কিন্তু চিকিৎসা চালাতে গিয়ে সেই চাকরিও ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে। তাঁর দুই ছেলে এবার এসএসসি পাশ করেছে জিপিএ ফাইভ পেয়ে। এই অবস্থার মধ্যে তাদের কলেজে ভর্তিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চরম অর্থ সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁর পরিবারকে। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে পড়েছে পরিবারটি। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টসহ সকলের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন অধ্যাপক শিল্পী খানমের পরিবার।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলী নোমান বলেন, ম্যাম অনেক বন্ধুসুলভ। তিনি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের আগলে রাখেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি মায়ের মতোই। তাঁর এমন অসুস্থতা আমাদের সবাইকেই মর্মাহত করেছে। আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পাশে থাকার চেষ্টা করবো। ম্যাম যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে সেজন্য আমাদের যা করার আছে তার সবিটুকু দিয়েই চেষ্টা করবো।
বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মুজাহিদ বিল্লাহ বলেন, ম্যাম অত্যন্ত স্নেহ করতেন আমাদের। আমরা সবাই তাঁর সদা হাস্যজ্বল মুখ দেখে এসেছি। নিজের সন্তানের মতো করেই আমাদের আদর-স্নেহ করতেন। ম্যাম অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করছি। ম্যামের চিকিৎসার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা যায় কিনা তা নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা কথা বলে উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা ম্যামকে সুস্থ দেখতে চাই।
অধ্যাপক শিল্পী খানমের স্বামী কাজী শফিকুল ইসলাম জানান, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ভারতে নিয়েও চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ভালো হলোনা। এখন লাস্ট স্টেজে আছে। এক কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়ে গেছে। এখন আর আমার চিকিৎসা খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য নেই। হাসপাতালে ১২ লাখ টাকার মতো বিল বাকি। এখন আমি সংকোচে হাতও পাততে পারিনা কারোর কাছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১০ লক্ষ টাকার মতো সহায়তা দিয়েছিলেন। আরো অনেক টাকা প্রয়োজন কি করবো জানা নেই। আর্থিক সহায়তা পেলে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারবো।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকর হোসেন বলেন, তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনিম যোগাযোগ করলে বিষয়টি আমরা সমিতির এক্সিকিউটিভ সভায় উত্থাপন করবো।
আর্থিক সহায়তা পাঠানোর জন্য:
কাজী শফিকুল ইসলাম (অধ্যাপক ড. শিল্পী খানমের স্বামী)
বেসিক ব্যাংক লিমিটেড
শান্তিনগর ব্রাঞ্চ
একাউন্ট নম্বর: 0914010004526