গাইবান্ধা প্রতিনিধি: প্রকৃতি মানুষকে যেন চরম শাস্তি দিচ্ছে ।দিনে তীব্র তাপদাহ, রাতে ভ্যাপসা গরম। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্বিষহ মাত্রার লোডশেডিং। সব মিলিয়ে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গ্রাম ও শহরের জনজীবন অতিষ্ঠ।
গতকাল ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে তীব্র এই তাপদাহে অস্বস্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে ঘন ঘন লোড শেডিং ।
লোড শেডিংয়ের প্রভাবে সেচ কাজ বিঘ্নিত হওয়ায় ধানক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে, আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষিজাতপণ্য উৎপাদন।
লোডশেডিংয়ের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে গড়ে দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহকরা ।
এদিকে ঘন ঘন লোড শেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় কর্মঘন্টা অপচয়ের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে উৎপাদন ফলে কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে জেলার কয়েক হাজার শিল্প উদ্যোক্তাদের।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বিপুল ফার্ণিচারের সত্ত্বাধিকারী বিপুল মিয়া জানান, আমার কারখানায় সব মেশিন বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে চালু থাকে । গত এক মাসে কাজের সময়ে অর্থাৎ সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটার মধ্যে গড়ে চার পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিংয়ের কারণে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে উৎপাদন চালু রাখতে আমাকে শক্তিশালী জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের মাটির সামগ্রী তৈরি কারখানার মালিক মহিদুল ইসলাম বলেন , আমার এখানে মাটি পোড়া ছাড়া সব কাজ, মেশিনের সাহায্যে হয় , দিনে পাঁচ ছয় ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে । আমাদের অল্প পুঁজির ব্যবসায় জেনারেটর কিনে তা চালানোর সামর্থ্য নেই। এই কারখানায় ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে । উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় সব শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, তীব্র গরমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ আর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে।
জানা যায়, গ্রীষ্মকালে গাইবান্ধা জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১১০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহে ঘাটতি থাকছে দৈনিক ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি ( নেসকো) সুত্রে জানা যায়, জেলায় নেসকোর দুই বিভাগের আওতায় প্রায় ৬৫ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। নেসকোর আওতায় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট।
অন্যদিকে জেলার অন্যতম বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দৈনিক চাহিদা প্রায় ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসিফ জানান, তীব্র গরমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে ।