মোঃ মহিবুল ইসলাম, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি:
বরগুনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) হালকা যান চলাচল প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রায় ৩শ’ লোহার সেতু সংস্কারের অভাবে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বরগুনা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় ‘হালকা যান চলাচল প্রকল্পের’ অধীনে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ৩৫টি, বেতাগীতে ৪৬, বামনায় ৩৬, পাথরঘাটায় ৬২ ও আমতলী উপজেলায় ৮৭টি সেতুসহ প্রায় ৩০০ সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এর পর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় এসব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সেতু পারাপারে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বর্তমানে অধিকাংশ সেতু মানুষ পারাপারে অনুপযোগী হয়ে আছে। কোথাও কোথাও স্থানীয়রা বাঁশ, কাঠ দিয়ে কোনোমতে চলাচল করলেও এসব সেতু দিয়ে চলাচলে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
প্রায় ২০ বছর আগে তালতলীর কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের সানুর বাজারে বেহালা খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ৮ বছর আগে সেতুটি ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা কাঠ, বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, ভাঙা সেতু দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার না হতে পারায় সেতু সংলগ্ন সাঁকোতেই প্রকাশ্যে সন্তান প্রসব করেছেন এক প্রসূতি। সাঁকো দিয়ে এরইমধ্যেই খালে পড়ে আহত হয়েছে শিশু সহ অনেকে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার ওই এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
বেহেলা গ্রামের মলয় হাওলাদার বলেন, ব্রিজ ভাঙা থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢুকতে পারে না। আমাদের বেহেলা গ্রামে ৪-৫ জন প্রসূতি নারীর বাচ্চা প্রসব হয়েছে ট্রলারে বসে। এরকম ব্রিজ আমাদের গলার কাটা। ব্রিজ না থাকলে ভালো হতো নতুন ব্রিজ হতো হয়তো।
এ বিষয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কথা না বললেও ভাঙা সেতুগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি। এ অবস্থা শুধু বেহালা ও শারিকখালী খালে নয়, জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ৩শ’টি লোহার সেতুর একই অবস্থা।
ভোগান্তির শিকার বরগুনা সদরের নলী সাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.রাসেল বলেন, বিগত ৫ বছেরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে আমাদের এখানের ব্রিজটি। আর সেই সমস্যা ভোগ করছি আমরা। ব্রিজের ওপারে চর মাইঠা প্রাইমারী স্কুল শিক্ষার্থী এখন দিয়ে সব সময় পাড়াপার করে । ব্রিজের ভোগান্তির কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত যেতে পারে না। দ্রুত এ সেতুটি নির্মাণ করার দাবি এলাকাবাসীর।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মুহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেখানে মানুষের বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো সমাধান করার। যদি জেলা পরিষদের পক্ষে কাজগুলো করা সম্ভব হয় তাদের মাধ্যমে ব্রিজ গুলো মেরামত করানোর চেষ্টা করবো। তাদের আওতায় না থাকলে এলজিইডি মাধ্যমে এই ব্রিজগুলো মেরামত করার চেষ্টা করা হবে।
বরগুনা ১ আসনের এমপি গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং আমার ধারণা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যতগুলো ব্রিজ সম্পূর্ণ করা যায় তারা সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন।