মঙ্গলবার, জুলাই ২৩, ২০২৪

সভাপতির ওপর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক

যা যা মিস করেছেন

আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ

রংপুরের তারাগঞ্জের চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরফরাজ আলম দুলালের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, বে-আইনি ভাবে বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি, অনিয়মিত বিদ্যালয়ে আগমন, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শিক্ষকদের হাজিরা রেজিস্টারে সাক্ষর দিতে বাঁধা প্রদান ও প্রায়সই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সভাপতিকে মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষকরা। এসব ঘটনার জেরে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি ) দুপুর ১২টায় চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের মাথায় কিলঘুষি মারছিল একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী। গলা ধরে শ্বাস রোধের চেষ্টা করে টেনে হিঁচড়ে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পার্শ্ববর্তী পাকা রাস্তায় তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত হয়ে সভাপতি আনোয়ারুলকে উদ্ধার করে পুনরায় বিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে যায় । পরে ইউএনও রুবেল রানা ও ওসি সিদ্দিকুল ইসলামের নির্দেশনায় অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়।

চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বদরগঞ্জ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক সরফরাজ আলম দুলাল আমার বিরোধিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছিল। শুরু থেকেই সে নির্বাচিত কমিটির প্রতিটি কাজে বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আসতেছে। বিদ্যালয়টি ব্যক্তিগতকরন ও নিজের লোকজনদের নিয়োগ করার পরিকল্পনা মাফিক সে বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে নানান পাঁয়তারা করেছিল ।

আমার আন্তরিক চেষ্টায় ন্যায়সঙ্গত ভাবে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম রক্ষায় মহামান্য হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিদ্যালয়টি যথাস্থানে পুনঃবহাল করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নামীয় ৬০ শতাং জমি অন্যত্র বিক্রির গোপন কথা ফাঁস হয়ে গেলে কমিটির কাছে সময় ভিক্ষা নিয়েও এখন অব্দি সে জমি ফেরত দেয়নি । প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসেন না ।

এলেও এক দিনে ১০-১৫ দিনের স্বাক্ষর করে যান। তার এমন স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে কথা বলায় ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধিকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেও দিচ্ছেন না দীর্ঘদিন থেকে। ম্যানেজিং কমিটির রেজ্যুলেশন বই, শিক্ষক হাজিরা খাতা তালাবদ্ধ করে রেখেছে। বিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে না জানিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মত ব্যয় করে আত্মসাৎ করেছেন।

উল্লেখিত বিষয় গুলো নিয়ে একাধিবার তাকে নোটিশ প্রেরন করে সতর্ক করে জাবাব চাওয়া হলে, সে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমাকে (সভাপতি) বিদ্যালয়ে আসতে নানাবিধ বাঁধার সৃষ্ট করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মে মাসে বদরগঞ্জ থানাধীন তালুক দামোদরপুর(চিলাপাক) বাজার সংলগ্ন বড় রাস্তা নামক এলাকায় সন্ধ্যার সময় আমাকে আক্রমণ ও প্রাণনাশের হুমকী দেয় এবং সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর হুশিয়ারি দেন প্রধান শিক্ষকের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী। বাধ্য হয়ে ২০২৩ সালের মে মাসের ২৮ তারিখ বদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (নংঃ১২২০) করি। সর্বশেষ অদ্য (১৩ ফেব্রুয়ারি) আমাকে কুকুরের মত মারপিট করে প্রধান শিক্ষকের চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনী।

স্থানীয় ও ভূক্তভোগীর বক্তব্য মতে, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির ভয়ে গত ৫ মে ২৩ ইং থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত সভাপতি প্রতিষ্ঠানটিতে আসতে পারেন নাই। পরে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে নিরাপত্তা সহায়তা নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৪ ইং বেলা আনুমানিক ১২টায় বিদ্যালয়ে আগমন করলে , পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ও শতাধিক স্থানীয় জনতার সামনে থেকে জিডিতে বিবাদির তালিকায় থাকা ব্যক্তিবর্গ ও তাদের নেতৃত্বে কতিপয় চিহ্নিত লোকজন সভাপতির উপর আক্রমণ করে এবং শার্টের কলার ধরে টেনে হিচরে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

তৎক্ষণাৎ পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীদের সহযোগীতায় সভাপতি আনোয়ারুল হককে উদ্ধার করে বিদ্যালয় ভবনে নিয়ে পুলিশি নিরাপত্তায় রেখে পরে পক্ষে-বিপক্ষের মারপিটের উত্তেজিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। এছাড়াও চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয় ও এসএসসি ভোকেশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন হুমকী ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষককে সভাপতির নামে অর্থ আত্মসাৎ এর মিথ্যে বানোয়াট গল্প বানানো এবং নকল প্রমাণপত্র তৈরি করার চাপ ও হুমকী দেন (বক্তব্য সংরক্ষিত)।

উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সরফরাজ আলম দুলালের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জানতে চাইলে মুঠো ফোনে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে অর্থের লেনদেন নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।

চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বর্তমান কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ গোলাম রসুল ও শাহাজাহান শেখ জানান, আমাদের ওপর প্রধান শিক্ষক দুলাল নানাভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে । আমাদের হাজিরা খাতায় কোন স্বাক্ষর দিতে দেন না । আমাদের কাছে সভাপতির নামে অর্থ আত্মসাৎ এর মিথ্যা সাক্ষ্য চেয়েছিলেন, আমরা মিথ্যাচারে অস্বীকৃতি জানাই বলে তিনি এমন নির্যাতন শুরু করেছেন। আমাদের এও হুমকি দিয়েছেন যে, সভাপতির নাম নিলে আমাদের হাত-পা কেটে দেবেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহেনা ইয়াসমীন জানান, চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় আমরা উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছি। দুই পক্ষের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছি পর্যালোচনার জন্য। আগামি রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) উভয় পক্ষকে নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের কাছে বসব।

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি, তবে কোন পক্ষের লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি নিরাপত্তার সহায়তা চেয়েছিলেন, পুলিশ তা দিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নিরবিচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে চিলাপাক উচ্চ বিদ্যালয়ের উভয় পক্ষকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে যথাযথ আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security