...
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

সোমেশ্বরী নদীর বালুমহাল ইজারা প্রদানের উপর স্থগিতাদেশ

যা যা মিস করেছেন

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোনা দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর বালুমহাল ইজারা সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। একই সাথে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে এই আদেশ নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে অবহিত করারও নির্দেশনা দেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক ২০১৫ সালে দায়েরকৃত জনস্বার্থে মামলা (নং ৫৩৩২/২০১৫) প্রদত্ত ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই তারিখের আদেশের বাস্তবায়ন ও বালুমহালে নতুন করে ইজারা দরপত্র সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদনের শুনানী শেষে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ আদেশের বিচারক ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ। বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি এস. হাসানুল বান্না জানান, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক, আদালতের আদেশ ও বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর বিধান লঙ্ঘন করে সোমেশ্বরী নদীতে মামলাভূক্ত পাঁচটি বালু মহাল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারার উদ্দেশ্যে বিগত ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে নতুন করে দরপত্র আহবান করেন। দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো আজ। বর্তমানে বালুমহালগুলো থেকে মোস্তাক আহমেদ রুহীর মালিকানাধীন মেসার্স রুহী এন্টারপ্রাইজ এবং মো. জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন মেসার্স জিহান এন্টারপ্রাইজ ইজারা গ্রহীতা হিসেবে বালু উত্তোলন করছে।

তিনি আরও জানান, অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন থেকে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদী রক্ষায় বেলা জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে মহামান্য আদালত বিগত ২৯ জুলাই, ২০১৫ তারিখে রুল জারি করেন। এ রুলে বালুমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসাথে সোমেশ্বরী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবেনা তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।

রুল জারির পাশাপাশি মহামান্য আদালত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক এবং দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে আইন অনুযায়ী উক্ত নদীর প্রতিবেশগত অবস্থা নিরূপণ করতে, আইন ও ইজারাশর্ত অনুযায়ী কঠোরভাবে নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ এবং বালু, পাথর ও মাটি উত্তোলনে পাম্প ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার প্রতিরোধ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বালু, পাথর ও মাটি উত্তোলন নিয়মিত তদারকি করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যাতে করে ইজারা গ্রহীতাগণ ইজারা চুক্তির বাইরে গিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার দুর্গাপুরের ইউএনও ও দুর্গাপরের পৌরমেয়রকে আদালতের নির্দেশ পালন সাপেক্ষে কমপ্লায়েন্স দায়ের করার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ এবং বালু, পাথর ও মাটি উত্তোলনে পাম্প ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিরোধে বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সোমেশ্বরী নদীতে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ইজারা গ্রহীতা ইজারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পুরো নদী থেকে হাজার হাজার নিষিদ্ধ ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত বালু তুলছে। প্রতিদিন গড়ে চার হাজার পাঁচশোটি ট্রাকে এই বালু পরিবহণ করা হয়। ভেজা বালু পরিবহনের ফলে আত্রাখালী, শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক সাধারণের চলাচলের অনুপযুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সোমেশ্বরী নদী থেকে বালুর ট্রাক চলাচলের জন্য সোমেশ্বরীর শাখা নদী আত্রাখালীর মুখে বালু ফেলে আত্রাখালী নদীকে পরিণত করা হয়েছে বালু চরে। বর্তমানে সোমেশ্বরী নদী থেকে আত্রাখালী নদীতে পানির কোন প্রবাহ নেই। বালু রাখার জন্য ইজারা গ্রহীতা ইতোপূর্বে দুর্গাপুরের বিরিশিরি পিসিনল বিদ্যালয়ের মাঠও ব্যবহার করেছে যা বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান এই নদীটির স্বচ্ছ জলরাশি ও অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করতো। এ নদীতে পাওয়া যেত মহাশোল মাছসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত হাজারো শ্যালো মেশিন থেকে নির্গত পোড়া মবিল ও তেল নদীর পানিতে মিশে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে নদীর পানি। ফলে নদীটির সৌন্দর্য যেমন বিপর্যস্ত পাশাপাশি মহাশোলসহ বিলুপ্ত হয়েছে শতাধিক প্রজাতির দেশিয় মাছ। অপরিকল্পিত ও আইনবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনে নদী ও নদী এলাকায় অবস্থিত তেরীবাজার, মুক্তারপাড়া, ভবানীপুর, ফারাংপাড়া, কামারখালি, কুলাগড়া, ডাকুমারা, শিবগঞ্জ, গাঁওকান্দিয়া, গোরাইত এবং বিরিশিরি নামক গ্রামসমূহ ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন রকম বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। দিন রাত খননযন্ত্র ও ট্রাক চলাচলের বিকট শব্দ এবং বাতাসে মিশে থাকা বালু কণা মানুষের শ্বাসকষ্ট ও শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি করছে। ভয়ংকর বায়ু দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চারপাশের এলাকা। প্রতিদিন চার হাজারেরও বেশী ভেজা বালুবাহী ট্রাক নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করছে বহুসংখ্যক বহিরাগত পরিবহন শ্রমিক। এতে এলাকার তরুণী ও নারীসহ লাখো মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ভেঙ্গে পড়েছে এলাকার সামাজিক সুরক্ষাবলয়। বেপরোয়া বালু উত্তোলনে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে বেলার আইনজীবি জানান।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.