মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী হয়রানিতে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে নিয়োগের সুপারিশ

যা যা মিস করেছেন

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ অক্টোবর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ভাইভা বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভায় যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা ছিলেন। তবে বোর্ডে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় মো. আহমেদ আলী নামে এক প্রার্থীকে। অভিযোগ রয়েছে উক্ত প্রার্থী এর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছাত্রী হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন এবং উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয় তার সাথে চুক্তি বাতিল করে।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন, আমি ওইসময়ে প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলাম না তবে এ বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকজন জানতে চাইলে আমি ওই বিভাগের তৎকালীন প্রধানো কাছে খোঁজ নেই এবং তিনি আমাকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। আহমেদ আলী আমাদের পার্টটাইম শিক্ষক থাকা অবস্থায় এক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। যেহেতু তিনি আমাদের পার্মানেন্ট শিক্ষক না তাই অভিযোগের পরপরই তার সাথে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

এছাড়া, অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সাথে ওই শিক্ষকের হোয়াটসঅ্যাপের আলাপচারিতার কিছু অংশও এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের এসব আলাপচারিতায় অভিযুক্ত শিক্ষককে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে।

 

যদিও অভিযুক্ত মো. আহমেদ আলীর দাবি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী কোর্সে কিছু পরিবর্তন আসাতে আমিই ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে এসেছি।

 

এদিকে, একাধিক প্রার্থীর দাবি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করতে ক্লাস লোড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত খারাপ অবস্থার কথা উল্লেখ করে তাদের ভাইভায় অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছেন। এমনকি এক্সপার্ট মেম্বারদের একাংশকেও যথাযথভাবে বোর্ড আয়োজনের বিষয়ে জানানো হয়নি।

 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে বর্তমানে এক্সপার্ট মেম্বার হিসেবে যে চারজন অধ্যাপক রয়েছেন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র অধ্যাপক বশির আহমেদ, অধ্যাপক শামসুন্নাহার খানম এ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক ড. খুরশিদা বেগম ব্যক্তিগত কারণে উপস্থিত হতে পারেননি এবং অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন কিছু সময়ের জন্য অনলাইনে যুক্ত হতে সক্ষম হন। তবে অধ্যাপক ড. খুরশিদা বেগম এবং ড. মো. সোহরাব হোসেন জানান তারা দেরিতে বোর্ডের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন।

 

ড. খুরশিদা বেগম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে বোর্ডে থাকতে পারিনি তাই সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে আমার যতটা মনে পড়ছে তুলনামূলক দেরিতে আমাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে যে সময় প্রয়োজন তখন ততটা সময় ছিল না।’

 

একদিন আগে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. হাসিবুর রহমান মুঠোফোনে বোর্ডের বিষয়ে জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে ১৫ দিন থেকে ১ সপ্তাহ আগেই রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে চিঠি এবং প্রার্থীদের বিস্তারিত পাঠানোর কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই করা হয়নি। আমাকে ড. হাসিবুর রহমান একদিন আগে মুঠোফোনে বোর্ডের বিষয়ে জানান। আমি তখন তাকে জানাই এত স্বল্প সময়ের নোটিশে গোপালগঞ্জে গিয়ে বোর্ডে অংশগ্রহণ সম্ভব নয় কারণ আমি এখনও প্রার্থীদের কোনো তথ্যই পাইনি।

 

তিনি আরও বলেন, ড. হাসিবুর রহমানকে আমি তাড়াহুড়ো না করে একসপ্তাহ পরে বোর্ড আয়োজন করতে বলি যাতে আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। কিন্তু তিনি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনসহ শিক্ষক স্বল্পতাকে কারণ হিসেবে দেখায় এবং আমাকে অনলাইনে যুক্ত হতে বলে। পরেরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দাবি করো আমাকে কাগজপত্র পাঠিয়েছে কিন্তু আমি তখনতো দূরের বিষয় এখন অবধিও কাগজ পাইনি, শুধুমাত্র মেইলে জুম লিংক পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি যখন অনলাইনে যুক্ত হতে যাই প্রথম ৪০ মিনিট হোস্ট জয়েনিং ওপেন করেননি এবং আমি যুক্ত হতে পারিনি। যখন যুক্ত হই তখন বেশ কয়েকজনের ভাইভা শেষ। পরবর্তীতে আমি যখন বোর্ড শেষে মতামত দিতে যাই এবং তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি তখন আমাকে বলা হয় আপনিতো শুরু থেকে ছিলেন না তাই আপনার মতামত নেয়া যাবে না। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছি নিয়োগ বোর্ডটি সঠিকভাবে হয়নি।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ড. হাসিবুর রহমান বলেন, এক্সপার্টদের বলার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের, চেয়ারম্যানের নয়। তাই কাকে জানানো হয়েছে বা হয়নি এ বিষয়ে আমি জানিনা। আর নিয়োগ বাণিজ্যের কথা যেটা বলা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

 

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, আমরা সবকিছু নিয়মানুযায়ী করেছি। আর যৌন হয়রানির বিষয়টা আমরা মৌখিকভাবে শুনছি এখনও লিখিত কিছু পাইনি। আমরাতো প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার তথ্য নেই, সেখানে এধরনের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য থাকেনা। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা বিষয়টি খোঁজ নিব।

 

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, আমরা যাকে নিয়েছি তার ফলাফল অত্যন্ত ভালো, দুটো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ভাইভায় ভালো করেছে একারণেই তাকে সুপারিশ করা। নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাইভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজনের পিএইচডি থাকুক বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা থাকুক সে যদি ভাইভাতে ভালো করতে না পারে আমরাতো তাকে নিয়োগ দিতে পারিনা।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security