শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪

সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি ছাড়া করলো ৩ ছেলে

যা যা মিস করেছেন

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

কৌশলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন ৩ ছেলে। ছেলের বউ দিয়েছে টাকা চুরির অপবাদ। শুধু তাই নয়, পেটের তাগিদে তাদের করতে হয়েছে ভিক্ষাও। এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছাড়তে হয়েছে সেই বাড়ি। নদীর পাড়ে শাড়ি আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস (৭০) ও বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস (৬০)।

শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গেলে তাদের কষ্টে জীবনযাপনের এ দৃশ্য চোখে পড়ে। তারা হলেন, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস জানান, চার ছেলে সন্তান নিয়েই ছিল তাদের সংসার। স্বামী ছিলেন সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নিয়েছে। সবার বড় ছেলে পরিমল বাবা মতোই সরল হওয়ায় তাকে দেয়নি কিছুই। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর যখন ছেলেদের সঙ্গেই তাদের ঘরে থাকতে হয়েছে। সে-সময় প্রায়ই না খেয়েও থেকেছেন। আবার পেটের তাগিদেও দুইজনের রাস্তা রাস্তায় ভিক্ষা করেও খাবার জোগাতে হয়েছে। এরপর একদিন তাদের ঘরের টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে লাত্তি মেরে বের করে দেওয়ার কথা বলে। এইসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে এখন বাড়ির সামনে নদীর পড়ে শাড়ি কাপড় আর টিনের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা বেলি রাণী বলেন, “তারার ঘরো রাইখা আমারে কয়েকদিন ভাতও দিছে না। রান্না কইরা তারা খাইয়া গেছে গা পরে আমি নিজে নিজে লাইয়া খাইছি। কয়েকদিন পরে ঝগড়া লাইগা ছেলের বউ আমারে লাত্তিয়া ঘরতে বাইর করে আর আমারে কই আমি তারার ঘরের এইটা-ওইটা চুরি কইরা লাই তারার ঘরো টাকা রাখলে টাকা থাহে না। পরে আমি কইছি এহন ২০০ টাকা নাই আরেকদিন কইবো তারার দরজা খোলা আছিন ৫ লাখ টাকা নাই আমি চুরি করছি তাই এই লজ্জায় বাড়ি ছাইরা এইনে এই ঘরো থাকতাছি, বৃষ্টি আইলে ঘরের ভিতরে পানিও পড়ে।”

বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস জানান,তিন ছেলে তার টিপসই চাইলে তিনি টিপসই দিয়ে দেন। এরপর তিন ছেলে মিলে যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবেই যে সম্পত্তি তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে তিনি বুঝতেই পারেননি।

বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস জানান, তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে দরবারে তিন ভাই মিলে নেওয়া জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা ফেরত দেয়নি।

অভিযুক্ত ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অস্বীকার করে জানান,বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করেনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতিমাসে টাকাও দিচ্ছি। তারই বউয়ের দেওয়া ঘর থেকে টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাটি এড়িয়ে যান তিনি।

এ প্রসঙ্গে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ নুরুল আকরাম খান জানান, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনাটি সত্যি। আমি তিন ছেলেকে অনেকবার বলেছি কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। ছোট দুই ছেলে খুবই খারাপ। বড় দুইজন বাবা-মাকে দেখাশোনার কিছুটা চেষ্টা করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security