মোঃ নাজমুল হোসেন বিজয়।
বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ

বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দম্পতির পারিবারিক দ্বন্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের ভয়ে বিদ্যালয় ছাড়ছে শিশুরা। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের বদলির দাবী জানিয়েছেন। দ্রুত তাদের বদলী করা না হলে অভিভাবকরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেনা বলে হুমকি দেন।
জানাগেছে, উপজেলার উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা নুরুননাহার সিদ্দিকা নিরু দম্পতির মধ্যে পারিবারিক দ্বন্ধ রয়েছে। তারা বিদ্যালয় এসে পারিবারিক বিষয়ে অহরহ মারধরে লিপ্ত হন এমন অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তাদের এমন কর্মকান্ড ও অশোভন আচরণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের আচরণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে না এসে ক্লাস ফাঁকি দেয়া, ল্যাপটপ ও রাউটার বাড়ীতে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ জুলাই থেকে ২২ আগষ্ট পর্যন্ত শিক্ষিকা নুরুননাহার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। বুধবার তিনি বিদ্যালয়ে আসেন। তাকে দেখেই শিশুরা শ্রেনী কক্ষ ছেড়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। পরে অভিভাবকরা এসে তাদের শান্ত করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষক দম্পতির বদলীর দাবী জানান। তাদের বিরুদ্ধে অভিভাবকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম ওই দম্পতিকে অনাত্র বদলী করতে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে সুপারিশ করেছেন এবং তাদের কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছেন।

শিক্ষার্থী মুন্নি, মারিয়া, উম্মে হানি ও মরিয়াম বলেন, শিক্ষিকা নুরুনন্নাহার সিদ্দিকা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের সাথে ঝগড়া করে, তারা স্বামী-স্ত্রী মারধর করছে। আমরা তাদের কাছে পড়াশুনা করতে চাইনা। তারা বিদ্যালয়ে আসলে আমরা ভয় পাই। তাদের বদলি করে নতুন শিক্ষক দেয়ার দাবী জানান শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবক হালিমা বেগম, আবুল হোসেন, আব্দুল জব্বার ও সোবাহান মৃধা বলেন, শিক্ষক দস্পতির কারনে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও শিক্ষার পরিবেশ নেই। তারা বিদ্যালয়ে এসে মারধর করছে। ওই শিক্ষক দম্পতিকে দ্রæত বদলী না করলে আমরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দেব।
সহকারী শিক্ষিকা রিমা বলেন, ওই শিক্ষক দম্পতি বিদ্যালয়ে এসে নিজেরা ঝগড়া ও মারধর করে। তাদের আচরণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে চলে যায়। তাদের দেখে শিক্ষার্থীরা ভয় পায়।
সহকারী শিক্ষিকা নুরুন্নানাহার সিদ্দিকা নিরু একমাস বিদ্যালয় অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে বিদ্যালয়ে আসিনি। তবে সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে আমার স্বামীর সাথে দ্বন্ধ ছিল কিন্তু এখন আর নেই।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্ত্রীর সাথে দ্বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয়ে এর প্রভাব পরছে না। বর্তমানে দ্বন্ধ নেই।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম বলেন, ওই শিক্ষক দম্পতিকে অনাত্র বদলির জন্য বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। তিনিই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওই শিক্ষক দম্পতিকে আপাদত দুই বিদ্যালয়ে ডেপুটিশনে দেয়া হবে। তাদের চুড়ান্ত বদলী করতে ডিডির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ডিডির অনুমতি পেলেই তাদের স্থায়ীভাবে বদলী করা হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version