আবদুল হান্নান। ১ জুলাই থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। অথচ ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে ইলিশ শূন্য মেঘনা তেঁতুলিয়া পাড়ের আড়তগুলোর মাঝে নেই চিরচেনা সেই হাঁকডাক। ফলে বিভিন্ন আড়তদার আর এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া জেলেদের হতাশায় দিন কাটছে।
এদিকে নদীতে ইলিশের সংকট দেখা যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
ভোলার জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মেঘনা- তেঁতুলিয়া নদী চষে বেড়াচ্ছেন। ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত জাল ফেলেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না। উঠছে না খরচের টাকাও। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
নদীতে চর জাগা, নাব্যতা সংকট, উজানের প্রবাহ কম থাকা এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীতে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়া, উজানে পাহাড়ি ঢল না থাকায় ভোলার নদীতে এখনো কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ ও জেলেরা।
তারা বলছেন, আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস পুরো মৌসুম। প্রতি বছর এ সময়ে ইলিশ বেচাকেনায় দৌড়ঝাঁপ থাকত। অথচ এবছর ঘাটগুলোতে তার পুরোই বিপরীত চিত্র।
এদিকে সরেজমিন ভোলা সদরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ইলিশা ঘাট, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, তুলাতুলি জেলেপল্লি ঘুরে দেখা যায়, দলবদ্ধভাবে নদীতে ইলিশ ধরতে গিয়েও খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। আর যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের নৌকার জ্বালানি খরচও উঠছে না। ফলে দৈনন্দিন সাংসারিক খরচ মেটাতে গিয়ে নতুন করে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বলে জানান জেলেরা।
ইলিশা, রাজাপুর,কাচিয়ার মাঝি শহিদ, লোকমান, হারুন বলেন, এই সময়টায় নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যেত কিন্তু এখন যে মাছ পায় তা দিয়ে আমাদের মাঝি-মাল্লার নৌকার খরচও উঠে না।ঋণ ধার-দেনা নিয়ে আমরা আছি হতাশায়।
ইলিশাঘাটের আড়তদার হারুন মাঝি বলেন, “ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শিকারের আশায় প্রতিদিনই জাল, নৌকা, ট্রলার ও বরফ নিয়ে দল বেঁধে নদীতে পাঠাচ্ছি জেলেদের। কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশা হয়ে তীরে ফিরছে। নদীতে মাছ নেই। আমাদের ব্যবসাও নেই। চরম বিপাকে আছি আমরা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা মো. এমদাদুল্লাহ জানান, বর্তমানে নদীতে ডুবো চরের কারণে পানির গভীরতা কম থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই নদীতে ইলিশ সংকট রয়েছে। তবে নদীতে পানি বাড়লে ও ভারী বৃষ্টি হলে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।জেলায় প্রায় দুই লক্ষ জেলেদের মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৮ হাজার। ইতিমধ্যে এদেরকে সরকার বিশেষ ভিজিএফ এর আওতায় এনেছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আহরিত হয় ভোলা জেলা থেকে।