রুহুল আমিন, ডিমলা(নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষে অসহায় লোকজনের মাঝে চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করায় ইউপি সচিবের নির্দেশনায় গ্রামপুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক। এমনকি ছিনিয়ে নেয়া হয় তার ক্যামেরা, গিম্বেল, মুঠোফোনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হওয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকে উক্ত ইউনিয়নের সচিব। গতকাল রবিবার (২৫ জুন) ভিজিএফ চাউল বিতরণকালীন সময়ে প্রতি বস্তায় আট কেজি চাউল কম দিয়ে সুবিধাভোগীদের সর্বমোট ২৬ টনের মধ্যে প্রায় তিন টন চাউল আত্মসাতের পায়তারার অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যম কর্মী আরিফুর রহমান ডালিম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল করিম যাদু, কামরুজ্জামান মৃধা টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে ইউপি সচিব রফিকুল ইসলাম কোনো তথ্য না দিয়ে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং গালমন্দ করেন।
এ সময় ইউনিয়নের সচিবের নির্দেশনায় গ্রাম পুলিশসহ অভিযুক্তরা হুকুম দিয়া বলেন, সাংবাদিকদের মারিয়া লাশ বানাও এবং সাংবাদিকতা করার শিক্ষা দাও। হুকুম পাওয়া মাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের আটক করিয়া এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে ও ধাক্কাধাক্কি করে লাঞ্ছিত করে।
সে সময় সচিব রমজান আলী, রশিদুল ইসলাম ও গ্রামপুলিশ সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, গিম্বেল ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীকালে ছবি ধারণকৃত হাতে থাকা মোবাইল ফোন ভাঙচুর করে তথ্যাদি নষ্ট করে ফেলেন। এরপর মুঠোফোনে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানো হলে তিনি তাৎক্ষণিক তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ইউপি সচিব রমজান আলীর কাছে সুবিধাভোগীদের কয়েকটি কার্ড জব্দ করে।
এ প্রসঙ্গে ভিজিএফ সুবিধাভোগীরা জানান- চাল বিতরণের শুরু থেকেই চাল কম দেয়া হচ্ছে। পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় চাল ওজন করলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ ঘটনা সচিবকে জানানোর পরপরই হঠাৎ ভিজিএফ সুবিধাভোগীদের সঙ্গে গ্রামপুলিশের হতাহতের ঘটনা ঘটে।
তিনি জানিয়েছেন, হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ও ট্যাগ অফিসার কোনো মন্তব্য না করে উল্টো চাল বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে বলে গ্রামপুলিশের সদস্যদের সাংবাদিকদের লেলিয়ে দেন। পরে ক্যামেরা, গিম্বেল, মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে স্মার্টফোন আছড়িয়ে ভেঙে ফেলেন গ্রামপুলিশ ও সেখানকার চাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এ বিষয়ে ভিজিএফ সুবিধাভোগী নাজিবুল্লাহ বলেছেন, চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় চাল বিতরণ বন্ধ করেন সচিব। এর কিছুক্ষণ পর চাল বিতরণে শুরু হলে আমি চাল নিতে যাই। তখন গ্রামপুলিশের সদস্য রশিদুল ইসলাম আমাকে ধাক্কা ও বেধড়ক মারধর করেন।
শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, গতকাল রবিবার (২৫ জুন) সকালে আমি আমার প্রতিবেশীর পাঁচটি কার্ডের চাল ইউনিয়ন পরিষদে তুলতে আসি। পরে চাল তুলে বাইরে ওজন করে দেখি ১০ কেজি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ৫ কার্ডে সর্বমোট ৪৪ কেজি চাল হয়েছে।
আব্দুর রশিদ নামে আরেকজন বলেন, সরকার আমাদের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। আর তারা আট কেজি করে চাল দিচ্ছেন। আমরা দুই কেজি করে চাল কেন কম নেব। আমাদের ১০ কেজি করে চাল বুঝিয়ে দিক।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. রমজান আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লাইছুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।