রুহুল আমিন, ডিমলা(নীলফামারী):
নীলফামারীর ডিমলায় প্রধান শিক্ষকের সেচ্ছাচারিতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দর খাতা গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে শিমু আক্তার(১৬)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিমু আক্তারের পিতা রবিউল ইসলাম অন্যের সাথে রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করছে। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শিমু আক্তারের চোখে শুধু পানি, হাউ মাউ করে কাঁদছে শিমু। সাথে মা রুবি আক্তার কাদছেন। মেয়ের অবুঝ মনকে সান্তনা দেওয়া মতো বাবা রবিউল ইসলাম আর মা রুবি আক্তারের কাছে নেই কোনো শান্তি বাণী। মেয়ে এই মানসিক অবস্থা দেখে যেন পুরো বাড়ি শোকে পরিনিত হয়েছে। অসহায়- দরিদ্র পরিবারে আরও একটি বছর লেখা পড়া চলানো যেন হয়ে পড়েছে গলার কাটা। একদিকে স্বল্প টাকায় সংসার পরিচালনা অন্য দিকে তিন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়া চালানো।
জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার খগা বড়বাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তার লিজাকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ১ হাজার ৭০০ টাকায় নির্ধারণ করা হলেও ২ হাজার ৪০০টাকা দিয়েছিলে ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার আগে সবার প্রবেশ পত্র হাতে দেওয়া হয়। শিমু আক্তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্র নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রধান শিক্ষক জানান শিমুর ফরম পূরন হয়নি। প্রধান শিক্ষকের নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি আশ্বস্থ করেন। এঘটানায় পরীক্ষা দিতে পারবেনা জেনে ওই শিক্ষার্থী ভেঙে পড়েছেন। গত ৩০ এপ্রিল দিবা গত রাতে একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থী শিমু আক্তারের সাথে কথা বলতে গেলে কাঁন্না ভেঙে পড়ে বলে কি কারণে ম্যাডাম আমার পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিলো না আমি বিচার চাই। আমার গরীব বাবা-মা কিভাবে আমাকে আরও একটি বছর লেখা পড়া চালাবে। সবাই ২ হাজার ৩০০ দিয়েছে
আমি ২৪০০ টাকা দিয়েছি। কিন্তু কেন? আমার ফরম পূরণ হয়নি?
শিমু আক্তারের মায়ের সাথে কথা বলতে গেলে তিনিও কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, শনিবার থেকে মেয়েটা কান্না কাটি করছে, দুদিন ধরে কিছুই খাচ্ছে না। রাতে রুমে গলায় ওড়না পেচিয়েছে, ছোট মেয়ের চিৎকার শুনে এসে নামিয়ে নেই। সারা রাত পাহারা দেই। বন্ধু বান্ধব সবাই পরীক্ষা দিতে গেলে আমার মেয়ে যাইতে পারেনি। তার কাছে আর ৬ হাজার টাকা চেয়ে ছিল ম্যাডাম। কই পাব টাকা?
শিমুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, মানুষের কাছে টাকা নিয়ে মেয়ের ফরম পুরণে টাকা দিয়েছি। মেয়েটা ফাস দিছিল কিভাবে বুঝাবো মেয়েটাকে? কেন দিতে দিল না পরীক্ষা? আমার মেয়ের কিছু হলে কে নিবেন দায়? ইউএনও আশ্বাস দিয়েছিল কিন্তু কিছুই হলো না? আমরা গরীব বলে আমরা ন্যায় বিচার কি পাব না?
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, এই শিক্ষক জঘন্য ইতিপূর্বে এরকম অনেক কর্মকান্ড রয়েছে। বেশি করে টাকা নেওয়া এছাড়া অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিচার হয়েছে অনেক বার।
ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা যদি কোনো গণ্যমাধ্যম বা কোনো অফিসার এলে কিছু বললে পরে শিক্ষার্থীদের মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করা হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পরে তিলক তমা রানী নামে এক শিক্ষককে উপস্থিত পাওয়ার পরে ওই শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান সবাই এসেছে কিন্তু বাহিরে গেছে। কতজন শিক্ষক এসেছে তিনি উপস্থিত সংখ্যা জানেন না। পরে সবাইকে ফোন করে নিয়ে আসেন? প্রধান শিক্ষককের অনুপুস্থিতে বিষয়ে বললে তিনি বলেন, তিনি বাহিরে গেছে দায়িত্বে রয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষক।
সহকারী প্রধান শিক্ষক আকমল হোসেন কে ফোন করা হলে তিনি জানান আমি নামাজ শেষে খাইতে এসেছি। আমি দায়িত্ব প্রাপ্ত সেটা আমি জানি না। মেডাম কখন গেছে সেটাও জানি না। কিছু সময় পরে তিনি উপস্থিত হলে মুভমেন্ট খাতায় প্রধান শিক্ষক প্রবেশের সময় থাকলেও বাহির হওয়া কোনো সময় পাওয়া যায়নি। এছাড়াও নিয়মিত এভাবেই চলে যান তিনি। দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষককের কোনো স্বাক্ষরও মিলেনি।
তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে আপনার ওনার কিছুই করতে পারবেনা? ইতিপূর্বে কত সাংবাদিব এসেছে। মাধ্যমিক অফিসার এসেছে, ইউএনও এসেছে কোনো কিছুই করতে পারেনি। বরং তারাই সাইলেন্ড হয়েছে। বর্তমান ডিডি স্যার তিনি নিজেই এখানে এসেছিলে কিছুই করতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক আমার বোন হয় মাঝে মাঝে এগুলো বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ওনার স্বামী রংপুর ক্যান্ট পাবলিককের প্রভাষক সেজন্য মনে হয় কেউ কিছু করতে পারে না। ওনি আসেন খুশি মতো আর চলে যান খেয়াল খুশি মতো। আমরা সবাই তার কাছে অসহায়। কেন আপনার অসহায় সেপ্রশ্নের জবাব দিতে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক। তিনি বলেন আপনারা বুঝে নেন।
একাধিক বার প্রধান শিক্ষক মারুফা আক্তারকে মুঠোফোনে ফোন করলে একবার রিসিপ হলেও তার অফিস সহকারী ফোন বলেন ম্যাডাম নেই। বলেই ফোনের সুইচ অফ।
এবিষয়ে ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুল হালিম জানান, তার কর্মকান্ডের কারণে একাধিক বার কারণ দর্শনের নোটিশ করা হয়েছিল কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। আমাদের কোনো কিছু করার নেই। সবকিছু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করতে পারেন।
নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, পরীক্ষার্থীও বলেনি, অভিভাবকও বলেনি বা প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাকে জানান নি, আমি একটি পত্রিকায় দেখেছি জেলায় কেন্দ্রে সচিবদের যে মিটিং ছিলো সেখানে বলেছি। তবু সেখানকার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেখতে বলেছি। যেহেতু ইউএনও বরাবর আবেদন করেছিল সেহেতু ইউএনও দেখবেন। ইউএনও যেহেতু সেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সেখানে তিনি, ফন্ট এ্যাকশনের মাধ্যমে পাঠাবেন। এবং দ্রুত সমাধান আসতো। আমি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য অবগত করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইত