বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

যা যা মিস করেছেন

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের একাডেমি বাজারে অবস্থিত কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ২০২১ সালে বিভিন্ন দৈনিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে কয়েক পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে অধিদপ্তরে। এরপর এ বছরের ২২ মার্চ ২০২৩ বেসরকারি কলেজ শাখা-৩ এর সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাস কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিসুর রহমান এর বরাবর এক পৃষ্ঠার চিঠি পাঠিয়ে ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চান।

সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে অধ্যক্ষের নিয়োগ বাণিজ্য, জাল সনদে শিক্ষক এমপিওভক্তি করণ ও সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী এবং কঞ্চিপাড়া সার্বিক উন্নয়ন কমিটির পক্ষে হাবিবুর ইসলাম তাজু, মেহেদী হাসান বাবু, শরিফুল ইসলাম, রায়হান আকন্দ রাজু এ অভিযোগপত্র পাঠান।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বিহীন বিধি সম্মত ভাবে নিয়োগ না হওয়া এবং অনলাইনে ভুয়া সনদসহ মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত হওয়ায়। কানিজ আফসানা জামান (ইনডেক্স নং ঘ ৫৬৭৯৮০৩২) কে জরুরী ভিত্তিতে বাতিল করা হোক এবং মে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেতন ভাতা বাবদ মোট উত্তোলিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমাদানের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হোক।

জাল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিও করিয়ে দিয়ে সরকারি অর্থ অপচয় সহযোগিতা করার জন্য এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন (ইনডেক্স নং- জ ৪৩৭১৫৩) অধ্যক্ষ, কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজ, ফুলছড়ি গাইবান্ধা এর এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিতসহ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাউশি এবং প্যাটার্ন বহির্ভূত নিয়োগ নিয়ে ২০০৪ খ্রি. এমপিও ভুক্ত হওয়ার প্রভাষক অর্থনীতি সুনীল কুমার বর্মণ (ইনডেক্স নং- ৩০ ১০৬৬০) ও নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পাড়ে বলে যানান।

এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার মতামতের আলোকে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর অনুচ্ছেদ ১৮.১ (গ) ও (ঙ) অনুযায়ী কেন অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন, কানিজ আফসানা জামান এবং সুনীল কুমান বর্মণ এর এমপিও কেন বাতিল করা হবে না মর্মে তাদের এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাউশি এবং প্রত্যেককে ৫ (পাঁচ) কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে মাউশি।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয় মুশাররত সুলতানা প্রভাষক অর্থনীতি এর বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৭ সালের ৭ জুন অনিস্পন্ন লীভ টু আবেদন নং ৫৯৩ ডভ ২০০৬ নিষ্পত্তি না হওয়া কলেজের অধ্যক্ষ টি এম রাশেদুজ্জামান রোকনের (ইনডেক্স নং- জ ৪৩৭১৫৩) এর এমপিও স্থগিত করা হউক মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন কঞ্চিপাড়া ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিয়োগ বাণিজ্য, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে টাকার বিনিময়ে চাকরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারা আরও জানান, শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক গঠিত ক্রয় ও অর্থ কমিটি থাকলেও অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী নিজেই ক্রয় করেন এবং ইচ্ছেমতো বিল ভাউচার সমূহ পাশ করান।

এবিষয়ে এলাকার স্থানীয়রা বলেন, অধ্যক্ষ অনেক দিন ধরে এগুলো অপরাধ করে আসছেন। অধ্যক্ষ ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকায় এলাকাবাসী তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের কে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। অনেকে জোরালো দাবি করে আরও বলেন, অধ্যক্ষ তার কলেজে দলীয় পদের ক্ষমতায় এসব অপকর্ম করতে সাহস পান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এই অধ্যক্ষ একজন দুষ্ট প্রকৃতির, দিনদিন তার অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে, তার বিভিন্ন অপরাধের কারনে কলেজ সহ শিক্ষা ব্যবস্থার বদনাম হচ্ছে। তাই অতি দ্রুত সময়ে অধ্যক্ষ সহ কলেজে সকল অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ যানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন বলেন, তদন্ত টিম এসেছিল। তবে তারা কী প্রতিবেদন দিয়েছে আমার জানা নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়েছে। এই অভিযোগ গুলো মিথ্যা আমাকে হেয় করার জন্য এসব করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিসুর রহমান বলেন, ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে অত্র প্রতিবেদনের আলোকে অধ্যক্ষ সহ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে (মাউশি) বরাবরে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিবো।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য। অধ্যক্ষ সুব্রত নন্দী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফওজিয়া ভানুর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে। কমিটি গত বছর ১২ অক্টোবর তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security