যশোরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এ হাসপাতালটিতে অভয়নগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ যশোর সদর, নড়াইল, মণিরামপুর ও খুলনার ফুলতলা উপজেলার একাংশের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।

ফলে কেবল নওয়াপাড়া শহরের বিপুল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালটিকে সারা বছর রোগীর ব্যাপক চাপ সামাল দিতে হয়। যে কারনে প্রায় দেড় যুগ আগে ৩৫ শয্যার হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। যা দেড় যুগ ধরে কেবল কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। দিন গেলেই হাসপাতালটিতে কেবল রোগীর চাপই বাড়ছে। কিন্তু বাড়েনি নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা। উপরোন্ত অর্ধশত বছর আগে নির্মিত জরাজীর্ণ ভবনে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। প্রতিনিয়ত পলেস্তারা খসে পড়ছে রোগীদের বেডে।

ইতিপূর্বেও পলেস্তারা খসে পড়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যেমন চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে তেমনি ডাক্তার ও সেবিকারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা চলমান রেখেছেন। ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। তবুও চরম অবহেলিত এ হাসপাতালটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের এবং ১০০ শয্যায় উন্নীত করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি বরাবরই ভুলন্ঠিত হচ্ছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।

জানাগেছে, ১৯৭৫ সালে নির্মিত হাসপাতাল ভবনটি ১৯৭৮ সালে চিকিৎসা সেবায় যাত্রা শুরু করে।

সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মাথার উপরে ছাদের পলেস্তারা অসংখ্য জায়গায় খসে পড়েছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে বড় বড় ফাঁটল। সেবিকাদের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বসে আছেন তিনজন সেবিকা। তাদের মাথার উপরও পলেস্তারা খসে পড়া বিধ্বস্ত ছাদ। কোথাও ফাঁটল। শয্যা সংকটের হাসপাতালটিতে রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে শয্যা স্থাপন করে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার ছাদের অবস্থা আরও বিধ্বস্ত। চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোতে জোড়া-তালি দিয়ে ও চুনকাম করে ফাটলগুলো আড়াল করা হয়েছে। খোদ হাসপাতালের টিএইচও এর কক্ষটিও এই বিধ্বস্ত ভবনে। তবে তার ভবনটিতে টাইলস দিয়ে এবং রং-চং করে ভবনের পৌঢ়ত্ব্য ঢেকে দেয়া হয়েছে। এ যেন ষাটোর্ধ নারীকে পার্লারে ঘষে-মেজে যৌবণে ফেরানোর বৃথা চেষ্টা মাত্র।

যশোর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সুত্রে জানাগেছে, হাসপাতালের ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থার খবরে সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন এবং যত দ্রুত সম্ভব রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তরের অনুরোধ করেছেন। অন্যথায় বড়ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার শংকাও প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রকৌশল অফিস সূত্র আরও জানায়, অর্ধশত বছর আগে নির্মিত ভবনটির আয়ুষ্কাল ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কমে গেছে রেইন ফোর্সমেন্টের স্ট্রেইনথ। ভবনটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ স্থানে হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থানান্তর জরুরী।

এদিকে হাসপাতাল রেজিস্টার সূত্রে জানাগেছে, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় সাড়ে ৫ শতাধিক রোগী। সীমিত জনবল দিয়ে হাসপাতালটিতে এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। তবুও একঝাঁক তরুণ চিকিৎসকের উদ্যমের কারনে চিকিৎসা সেবা চলমান রাখা সম্ভব হয়েছে। হাসপাতালটির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য অসংখ্যবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও অদ্যবধি ৩১ শয্যার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চলতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে।

এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান নির্বাহী প্রকৌশলীর পরিদর্শন ও উদ্বেগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি নিজেও রোগী ও চিকিৎসক-সেবিকাদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। এই মুহুর্তে ভবনটি থেকে স্বাস্থ্য সেবা সরিয়ে নেয়ারও কোন ব্যবস্থা নেই। অচিরেই হাসপাতালটিকে একশত শয্যায় উন্নীত করে সে অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অন্যথায় জান মালের ক্ষতির আশংকাও করেন তিনি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version