মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ একটি চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ বন। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয় বর্তমান সরকার। ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ এই বনে উল্লুক, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আছে। লাউয়াছড়া ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র।
প্রতি বছর উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথে অর্ধ শতাধিক বিপন্ন, বিরল বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। নানা রকম বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বনকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। কিন্তু এই বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ। এই রেলপথটি বন্যপ্রাণীর নিরাপদ চলাচলে একটি বড় ঝুঁকি হয়ে আছে। প্রায় প্রতি বছরই দ্রুতগতির ট্রেনের নিচে কাঁটা পড়ে বিরল প্রজাতির প্রাণী মৃত্যুসহ বিুলপ্তপ্রায় অনেক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। কোনোভাবেই বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারে নিয়ন্ত্রিত রাখতে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছে বন্যপ্রাণী বিভাগ। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে গতিসীমা কমাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটার রাখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়েকে নির্দেশ দিয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে আরো জানা যায়, ‘বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ট্রেনের গতি কমাতে বন অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে থেকে ২০২১ সালের ৮, ১৪ ও ২০ নভেম্বর, ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি, ২ অক্টেবর, ১০ নভেম্বর ও গত ২৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া হয়েছে। এই চিঠিতে বলা হয়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেললাইনে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রোধ ও এদের জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বিদ্যমান রেলওয়ে দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে ট্রেনের গতিসীমা কমানো খুবই দরকার। এর জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রতি বছর অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এখন গতিসীমা কম হচ্ছে সে ক্ষেত্রে ট্রেনে যাওয়া যাত্রীরা বনের দৃশ্য উপভোগ করে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। গতি কমানোর ফলে বিরল প্রজাতীর প্রাণী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।’
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version