দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

শুভ তংচংগ্যা, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: সাধনানন্দ মহাথেরোর ১০৪তম জন্মদিন আজ। তিনি ‘বনভান্তে’ নামে সমধিক পরিচিত। ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি শহর থেকে দক্ষিণে মগবান মৌজার মোরঘোনা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বনভান্তের গৃহী নাম ছিল রথীন্দ্র চাকমা। শৈশবে তিনি আশপাশের প্রকৃতির মতোই শান্ত ছিলেন। দুরন্তপনার পরিবর্তে তাঁর মধ্যে সব সময় একটা শান্ত ও ভাবুক প্রকৃতি ছিল। একটু বড় হতেই তিনি বাবাকে হারান। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে অনটনের সংসারে মাকে আর্থিক সহায়তার জন্য একসময় রাঙামাটি শহরে এসে দোকানের সহকারীর কাজ নেন।

১৯৪৯ সালে ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারে রথীন্দ্র চাকমা প্রথম প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। সেখানে তিন মাস কাটানোর পর নির্বাণ মার্গের (দুঃখ থেকে মুক্তির পথ) উপায় সম্পর্কে কোনো ধারণা না পেয়ে তিনি কাপ্তাইয়ের সন্নিকটে ধনপাতায় ফিরে যান। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর তিনি গভীর অরণ্যে কঠোর সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। তাঁর সাধনাকালীন কাপ্তাই বাঁধ চালু হলে ধনপাতা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে তাঁকে ওই এলাকা ত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীকালে তিনি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় গিয়ে তাঁর সাধনা চালিয়ে যান। গভীর বনে সাধনা করেন বলে তিনি জনসাধারণের কাছে ‘বন শ্রামণ’ হিসেবে পরিচিতি পান। প্রব্রজ্যা গ্রহণের ১২ বছর পর ১৯৬১ সালের ২৭ জুন জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে তিনি উপসম্পদা (ভিক্ষু) গ্রহণ করেন। ‘বন শ্রামণ’ সাধনাতেই আনন্দ লাভ করেন বলে উপসম্পদা গ্রহণের পর তাঁর নাম রাখা হয় ‘শ্রীমৎ সাধনানন্দ ভিক্ষু’। উপসম্পদা গ্রহণের পর তিনি ‘বন শ্রামণ’ থেকে ‘বনভান্তের’ নামেই বেশি পরিচিতি পান।

ভিক্ষু হওয়ার পর বনভান্তে দীঘিনালায় ১৯৭০ সাল, এরপর তিনি প্রথমে দুরছড়ি ও পরে লংগদুর তিনটিলা বৌদ্ধবিহারে অবস্থান করে বৌদ্ধধর্ম প্রচার এবং ধর্মীয় দেশনা দিয়ে সাধারণ মানুষকে অপকর্ম থেকে দূরে থেকে সৎ পথে সমৃদ্ধ হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন । ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির রাজবনবিহারে অবস্থান করতে সম্মত হন। অবশেষে ১৯৭৭ সালের বৈশাখী পূর্ণিমার প্রাক্কালে তিনটিলা থেকে সশিষ্যে রাঙামাটিতে এসে স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন।

১৯৭৪ সালে বনভান্তে সেই প্রাচীন রীতি প্রচলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের মধে্য অনন্য নজির রচনা করেছেন। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে বনভান্তের অন্তর্নিহিত সম্যক জ্ঞানের পরিধি ছড়িয়ে পড়েছে।

বনভান্তে যে সময় প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের, বিশেষত চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ছিল না বললেই চলে। তাঁরা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম অনুকরণ করতেন। বিভিন্ন দেব-দেবী পূজার পাশাপাশি পশু বলি, গাঙপূজা, বৃক্ষপূজা ইত্যাদি রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। সে সময়ে মূলত লুরী (তান্ত্রিক) গণই ধর্মীয় আচারাদিতে প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু কালক্রমে সে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। বনভান্তের আবির্ভাবের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ধীরে ধীরে বৌদ্ধধর্ম স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বনভান্তে তাঁর জীবদ্দশায় পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানি ও নিপীড়নকে কখনোই সমর্থন করেননি। তিনি তাঁর ধর্মীয় দেশনা প্রদানের পাশাপাশি হানাহানি পরিহার করে পারস্পরিক মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিতেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকার।

বনভান্তে তাঁর জীবদ্দশায় পার্বত্য চট্টগ্রামে লোকোত্তর সাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাথেরো বনভান্তে ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি ৯৪ বছর বয়সে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পরিনির্বাণ লাভ করেন।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version