সোমবার, এপ্রিল ৮, ২০২৪

যারা সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতি করতে চায় তাদের বর্জন করার আহবান তথ্যমন্ত্রীর

যা যা মিস করেছেন

যারা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তাদের বর্জন করতে হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

নগরীর প্রবর্তক মোড়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর উদ্যোগে আজ বিকালে আয়োজিত রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে লালন-পালন করে, সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যারা দেশে গন্ডগোল পাকায়, যারা এই অসাম্প্রদায়িক দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, অতীতে করেছিল, তাদেরকে আপনারা চেনেন, তাদেরকে বর্জন করুন।’

ইসকন প্রবর্ত্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন ও ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী।

চট্টগ্রামে রথযাত্রা উৎসবের গৌরবোজ্জ্বল অতীত তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রথযাত্রা চট্টগ্রামে একটি বড় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই রথযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। হাজার হাজার মানুষ এই রথযাত্রায় অংশ নেন। নগরীতে এই উৎসব প্রতিটি মানুষ উদযাপন করেন। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানাবিধ অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। এই রথযাত্রাও আমাদের সংস্কৃতির অংশ। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্যই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ স্বীকার করুক আর না করুক ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র আর মুসলিমদের জন্য আরেকটি রাষ্ট্র। কিন্তু বিভাজনের পর আমরা বাঙালিরা অনুধাবন করেছি, এই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের জন্য নয়। কারণ আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমরা বাঙালি, বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পাকিস্তানে সেই সংস্কৃতি এবং পরিচয় যখন হুমকির মুখে পড়লো তখন জাতির পিতার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ রচিত হলো।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন,‘ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে চেতনার ভিত্তিতে, যে অসম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে ধারণ করে আমাদের পূর্বসুরীরা দেশ রচনা করেছিলেন, লাল-সবুজ পতাকার জন্ম হয়েছিল,  সেই চেতনার মূলে আঘাত হানা হলো। রাষ্ট্রের পরিচয় বদলে দেয়া হলো। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা হলো, অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর যেই চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয়েছিল রাষ্ট্রে সেই মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়েছেন।’ গত সাড়ে ১৩ বছর ধরে দেশ পরিচালনার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের যে পরিচয় নষ্ট করা হয়েছিল সেটি আবার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার, সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করছে।

ড. হাছান বলেন, আমাদের এই দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং সাপের মতো ছোবল মারার চেষ্টা করে। বিভিন্ন সময় সেই অপচেষ্টা হয়েছে। আমাদের সরকার সেগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করেছে। আমরা যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর। এই রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেজন্য দুর্গাপূজার সময় যেভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিল, তড়িৎ গতিতে সেগুলোকে দমন করা হয়েছিল। সরকারের পক্ষে দ্রুত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন,‘ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দেশে যারা সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে রাজনীতি করে, তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা এবং ভারত বিরোধিতা। যখন নির্বাচন আসে তখন তারা সাম্প্রদায়িকতাকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসে। বলতে শুরু করে আওয়ামী লীগ হচ্ছে হিন্দুদের দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে ভারতের চর। যদিও এই সমস্ত ট্যাবলেট আগের মতো কাজ করে না।’

হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন অতি সন্নিকটে। তারা আবারও একই স্লোগান নিয়ে হাজির হবে। আমাদের সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অনেক কাজ করেছে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর একটি আইন করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে, শত্রু সম্পত্তি আইন। দেশের তিন কোটি মানুষকে শত্রু আখ্যা দিয়ে কোনো আইন হতে পারে না। সে কারণে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই আইন পাল্টে দিয়েছেন। সেই আইনের সুযোগ নিয়ে যে সম্পত্তিগুলো বেহাত হয়েছিল সেগুলো ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যেমন পূজার সময়ের বরাদ্দ এই সরকারের সময়ে কতটুকু এবং আগের সরকারের সময়ে কতটুকু ছিল, তা দেখলেই বোঝা যায়। এখন চাকুরির ক্ষেত্রেও সচিবালয় থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন দেখলে বোঝা যায়, সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হার এখন কতটুকু, আগে কতটুকু ছিল। এই বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, আমাদের সরকার সবার অধিকার নিশ্চিতের জন্য কি কাজ করছে। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সনাতন সম্প্রদায়ের পুলিশ কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেটা আগে কখনো ছিল না। দেশের প্রধান বিচারপতিও সনাতন সম্প্রদায়ের একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, যেটি আমাদের সরকার করেছিল।’

দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়

 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security