বিশ্বে পরিবেশ দূষণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। আর এই দূষণ-মানচিত্রের মৃত্যুতে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে দূষণের কারণে ২০১৯ সালে ২৩ লাখ ভারতীয়র মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখই বায়ুদূষণে। এ ছাড়া প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মৃত্যু হয়েছে পানিদূষণে। লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ল্যানসেটের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বিশ্বে প্রতি ছয় মৃত্যুর একটির জন্য দূষণকে দায়ী করা হয়েছে।
সাময়িকীটি আরও বলছে, ভারত বায়ুদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। দেশটিতে বায়ুদূষণে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।চ ল্যানসেট–এর সাম্প্রতিক এই গবষেণাটি মূলত ২০১৫ সালে হওয়া গবেষণার হালনাগাদকরণ। সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য নেওয়া হয়েছে গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ, ইনজুরিজ অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টর স্ট্যাডি–২০১৯ থেকে। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
গৃহস্থালির সঙ্গে সম্পৃক্ত দূষণ ও পানিদূষণে মৃত্যু কমলেও কলকারখানার দূষণ, বায়ুদূষণ এবং বিষাক্ত রায়ায়নিক দূষণের কারণে মৃত্যু ঠিকই বেড়েছে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিকভাবে গৃহস্থালি ও কলকারখানাসহ বিভিন্ন বাহ্যিক বায়ুদূষণে ৬৭ লাখ মানুষ মারা গেছে। পানিদূষণ ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, আর সিসা (লেড) দূষণ ৯ লাখ মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। গবেষণা বলছে, দূষণজনিত মৃত্যুর ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। এর মধ্যে ২৩ লাখ মৃত্যু নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারত। তাদের প্রতিবেশী চীনের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ লাখ।
গবেষণা প্রতিবেদন আরও বলছে, ২০০০ সালে প্রচলিত দূষণের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ভারতের জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য তখন থেকে প্রচলিত দূষণের কারণে দেশটিতে মৃত্যুর হার কমছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে। তারপরও ক্ষতির হার এখনো দেশটির জিডিপির ১ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। এদিকে ২০১৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বায়ু, রাসায়নিক ও সিসার মতো দূষণ বেড়েছে, যা ভারতের জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ শতাংশের মতো। তবে ভারত বায়ুদূষণ কমাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে, সেটাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্চাভিলাষী ‘উজ্জওয়ালা যোজানা’ প্রকল্পের কথা। ২০১৬ সালে মোদি এই প্রকল্প গ্রহণ করেন গ্রামীণ গরিব মানুষের রান্নার গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহী করতে। তবে এ ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারত দূষণের উৎস উৎপাটনে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রীয় পদ্ধতি না থাকার কারণে এই উদ্যাগগুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রা অর্জন করতে পারছে না।’ এ গবেষণা আরও বলছে, ভারতের ৯৩ শতাংশ এলাকাতেই দূষণের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের চেয়ে অনেক বেশি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানান, বৈশ্বিক দূষণ র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের শহরগুলো ওপরের দিকে। উত্তর ভারতের ৪৮ কোটির বেশি মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভয়াবহ পর্যায়ের বায়ুদূষণের’ মুখোমুখি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দূষণ-তালিকায় ১৭৭ নম্বরে ছিল ভারত। এর পর ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’-এর রিপোর্ট জানিয়েছিল, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১২ লাখ মানুষের।