১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অগ্নিঝড়া বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালিরা নিজেদেরকে স্বাধীনতার রঙে রাঙাতে চেয়েছিল।চেয়েছিল প্রিয় বাংলাদেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করতে, চেয়েছিল স্বাধীন বাতাসে স্বাধীন আকাশে নিজেদেরকে মেলে ধরতে। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় দিবস।১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় রক্তে রাঙ্গিয়ে আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যে সংগ্রামে নেমেছিল এদেশের মানুষ, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহংকারের দিন এই ২৬শে মার্চ। ভয়াল কাল রাত্রির পোড়াকাট, লাস আর জননীর কাননা নিয়ে রক্তে রাঙ্গা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। সারি সারি স্বজনদের মৃত্ দেহ, আকাশে কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে ধোয়া জ্বলে উঠলো মুক্তিকামী মানুষের চোখ,গড়লো প্রতিরোধ, মৃত্যু ভয় তুচ্ছ করে জয় বাংলা স্লোগান তুলে ত্যাগের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক। পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনাপন্ন হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে বীর বাঙ্গালি, ঘোরতর অমানিসা ভেদ করে দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার রক্তিম র্সূয। বাঙ্গালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল আজকের এই দিনে। ১৯৪৮ এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ৫২ এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৫৪ তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয় লাভ, ৫৬ এর সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন,৫৮ এর মার্শাল-ল বিরোধী আন্দোলন,৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এ বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন,৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর রক্তঝড়া গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা ভিত্তিক ৭০ এর ঐতিহাসিক সাধারণ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের জয় এবং সবশেষে ১৯৭১ এর ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণ এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। ২৫শে মার্চ রাতে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালির উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার এর পূর্ব মূহুর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের জনগণ জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। র্দীঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদের প্রাণ, দুই লক্ষ মা বোনের সম্মানহানি এবং কোটি কোটি আমজনতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের প্রিয় স্বাধীনতা। বাংলাদদেশ পেয়েছিল একটি স্বাধীন ভূখণ্ড,একটি পতাকা, একটি মানচিত্র এবং বিশ্বের বুকে একটি গর্বিত পরিচয়।
লেখকঃ মোঃইয়ামিন
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়