ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় স্বজন হারানোর বেদনায় মনির হোসেন’র ঝালকাঠি সদর থানায় দায়ের করা মামলাটি নৌ আদালতে প্রেরণ করেছে ঝালকাঠির আদালত। নৌ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ে ঝালকাঠির আদালতে বিচার্য্য না হওয়া ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত নৌ পরিবহণ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতে ধার্য তারিখে এ আদেশ দেন ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক এএইচএম ইমরানুর রহমান। বিকেলে এ আদেশ জারী করেন তিনি।
মামলার বিষয়ে আসামী পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জিকে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সদর থানায় স্বজন হারানোর বেদনায় সোমবার (২৭ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজন মনির হোসেন মামলাটি করেন। ঢাকা ডেমরা এলাকার মনির হোসেনের দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয় অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, লঞ্চে থাকা দুই মাস্টার রিয়াজ সিকদার ও মো. খলিল, দুই ড্রাইভার মো. মাসুম ও কালাম, সুপারভাইজার মো. আনোয়ার, সুকানী আহসান এবং কেরানী কামরুল।
মামলা বাদি মনির হোসেন বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় লঞ্চে থাকা যাত্রী তার ৩২ বছর বসয়ী বোন তাসলিমা আক্তার, দুই ভাগনি ১৫ বছরের সুমাইয়া আক্তার মীম ও ১০ বছরের সুমনা আক্তার তানিশা এবং ৭ বছর বয়সী ভাতিজা জোনায়েদ ইসলাম বায়জিদ এখনো নিখোঁজ আছে।’
এজাহারে বলা হয়, রাতে লঞ্চের ইঞ্জিনে যখন ত্রুটি দেখা দেয়, তখনও লঞ্চের স্টাফরা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলতে থাকেন। লঞ্চটির নিচতলার পেছনের অংশে থাকা ইঞ্জিন রুমে যখন আগুন ধরে যায় তখন চালক ও স্টাফরা যাত্রীদের বাঁচাতে লঞ্চ তীরে ভেড়ানো বা নোঙ্গর করার চেষ্টাটুকুও করেননি। বরং নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়েছেন। মামলায় লঞ্চটিতে নিরাপত্তা সামগ্রীর ঘাটতির কথাও উল্লেখ করা হয়। ঝালকাঠিতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর একই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া একটি মামলা হয় রাজধানীর মতিঝিলের নৌ আদালতে। সে মামলায় লঞ্চের মালিক হামজালালকে নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নৌ-দুর্ঘটনা বিষয়ক মামলার বিচারকার্যক্রম ঝালকাঠির আদালতে বিচাযর্য না হওয়ায় ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত নৌ পরিবহণ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। আদালতে ধার্য তারিখে এ আদেশ দেন ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক এএইচএম ইমরানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে এ আদেশ জারী করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার নৌ-আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। সেই মামলায় লঞ্চের মালিক মো. হামজালাল শেখ কারাগারে আছেন। একই ইস্যুতে বরগুনায় এক আইনজীবীর দায়ের করা মামলায় মালিক হামজালালকে জামিন প্রদান করে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।
গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চল্লিশেরও বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। নিখোজও রয়েছে অসংখ্য যাত্রী।