করোনায় (কোভিড-১৯) বিধ্বস্ত ভারত। বেশ কয়েকদিন ধরে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে। হাসপাতালে জায়গা নেই। অক্সিজেনের তীব্র সংকট।
পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। শ্মশানগুলোতে মৃতদেহ পোড়ানোর আর জায়গা হচ্ছে না। এখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে পার্কিং লটগুলো। এমনকি জায়গা নেই কবরস্থানেও।
মুখের শ্বাস দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি স্ত্রী। অ্যাম্বুলেন্স থেকে সড়কে ছিটকে পড়ছে করোনা রোগীর লাশ। এমন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, টুইটারে।
এবার তেমনি আরেক করুণ দৃশ্য সামনে এলো। একটি অ্যাম্বুলেন্সে ২২টি মরদেহ গাদাগাদি করে সৎকারের জন্য শ্মশানে নেওয়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে।
টুইটারে কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মহারাষ্ট্রের বীড জেলার অম্বেজোগাইয়ের স্বামী রামানন্দ তীর্থ মরাঠাওয়াড়ায় সরকারি হাসপাতালের মর্গের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স। তাতে করোনায় মৃতদের দেহ গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে। বস্তাবন্দি মরদেহ দাবিয়ে দাবিয়ে জায়গা তৈরি করে আরও দেহ রাখা হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরদেহ এভাবে গাদাগাদি করে তোলার সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। মৃত রোগীর স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করলেও কেউ তাদের কথায় কান দেয়নি। তারা অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ গাদাগাদি করে তোলার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে গেলে পুলিশ তা কেড়ে নেয়। মরদেহ সৎকার শেষে স্বজনদের মোবাইল ফেরত দেয় পুলিশ।
এদিকে এ ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মহারাষ্ট্রসহ গোটা ভারতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা ঘটনার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বীড জেলার প্রশাসক রবীন্দ্র জগতপ বলেন, ‘অম্বেজোগাইয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কারও দোষ থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হাসপাতালের ডিন শিবাজি সুকরে বলেন, ‘সৎকার করতে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। আমরা আরও অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানিয়েছি। কেউ মারা গেলে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে মরদেহ তুলে দেয়া পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব। তারা কীভাবে শ্মশান বা কবরস্থানে নিয়ে যাবে, তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’
ওয়ার্ল্ডো মিটারের মঙ্গলবার সকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৭৬৪ জন।
আগের দিন সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩১ জন। একই সময়ে মারা যান ২ হাজার ৮০৬ জন। ভারতে করোনার মোট সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৫ জনে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮০ জন। করোনার বৈশ্বিক সংক্রমণ তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয় আর মৃত্যুতে চতুর্থ।