মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে কৃষক হাদিসের জীবন। মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাস তার ৯ একর জমির ধান পুরোটাই জ্বলে গেছে।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটি গ্রামের কৃষক হাদিস মিয়া জানান, তিনি মহাজনের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা সুদে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৯ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। রবিবার বিকালে জমিতে গিয়ে ফলন ভালো দেখে খুশিতে মন ভরে গিয়েছিল। কিন্তু রাতের ১০ মিনিটের গরম ঝড়ে তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। সোমবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন সব শেষ হয়ে গেছে।
শুধু হাদিস মিয়ারই নয়, রায়টুটির তলার হাওরের আব্দুল লতিফের ৩০ কাঠা জমি, লাহুত মিলকির তিন একর জমি, তমজিদ মিয়ার ১৫ একর জমি, মজিদ মিয়ার পাঁচ একর জমি, আব্দুল হেকিমের ১২ একর জমি, নয়ন মিয়ার সাত একর জমির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আব্দুল হেকিম বলেন, গরম বাতাসে আমার সত্তর বছরের জীবনে এমন ক্ষতি আর দেখিনি। তিনি জানান, পাঁচ লাখ টাকা মহাজনি ঋণ নিয়ে ১২ একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। এখন পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। সব হারিয়ে তিনি অনেকটা বাকরুদ্ধ।
রবিবার রাত ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিবিহীন ঝড় বয়ে যায়। এরমধ্যে মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে কিশোরগঞ্জের হাওরের প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান জ্বলে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৩ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ধান। জেলার অন্যান্য স্থানেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ছাইফুল আলম জানান, বৃষ্টিবিহীন গরম ঝড়ো বাতাসে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে সকল জমিতে ধানের ফুল গজিয়েছিল, ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার গরম বাতাসে সেসব জমির ধান (পুড়ে) চিটা হয়ে গেছে।
ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান জানান, হাওরের কৃষকরা একটিমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এমন ক্ষতিতে তারা দিশেহারা। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে অনেক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, তিনি কৃষি বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। তালিকা পেলে সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়কে লিখিত আকারে জানানো হবে।