পেয়ার আহাম্মদ চৌধুরী, ফেনী জেলা প্রতিনিধি: ফেনীর দাগনভূঁঞায় সিজারের সময় কিডনির নালি কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন ফেরদৌস আরা নামে এক গৃহবধূ। এ বিষয়ে গত ৩১ জুলাই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীদের স্বজনেরা।
ফেরদৌস আরা দাগনভূঁঞা উপজেলার এয়াকুবপুর ইউনিয়নের করমউল্যাহপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন রাতে প্রসব বেদনা নিয়ে গৃহবধূ ফেরদৌস আরাকে একই উপজেলার ফাজিলের ঘাট রোডের আয়শা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনি চিকিৎসক চম্পা কণ্ডুর কাছে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়। চম্পা কণ্ডু এসে গৃহবধূর অবস্থা জটিল বলে নরমাল ডেলিভারি করলে সমস্যা হবে ভয় দেখিয়ে দ্রুত গৃহবধূর অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার করতে গৃহবধূর স্বামীর কাছ থেকে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু সিজারের পর থেকে অনবরত প্রস্রাব বের হওয়ার পাশাপাশি জ্বর, পেটে ব্যথাসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন গৃহবধূ ফেরদৌস আরা।
পরে গত ২৪ জুলাই ফের ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এ সময় আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে কিডনির নালি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। পরে ৩ আগস্ট রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে রিলেজ দিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর গৃহবধূর স্বামী শাহাদাত হোসেন বলেন, চিকিৎসক চম্পা কণ্ডু ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ নন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলে এত বড় ভুল করতেন না। চিকিৎসকের ভুলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমার স্ত্রীর অনবরত প্রস্রাব হচ্ছে এবং কোমরে ব্যথাসহ জ্বরে ভুগছেন। আমার স্ত্রী শারীরিকভাবে প্রায় অক্ষম। তাঁর চিকিৎসা করতে করতে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে চিকিৎসক চম্পা কুণ্ডুকে জানালেও তিনি গুরুত্ব না দিয়ে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে বলেন। কিন্তু সেখানে কিডনি বিষয়ক চিকিৎসার খরচ ৪-৫ লাখ টাকার মতো পড়বে। তাই আর্থিক সংকটে চোখের সামনে স্ত্রীর এমন করুণ অবস্থা দেখতে হচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না। আমার স্ত্রীর এই অবস্থার জন্য ওই চিকিৎসকের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী শাহাদত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে ওই চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা সবাই একজোট হয়ে না না কথা বলে আমাদের হয়রানি করছেন। কিন্তু কী করলে আমার স্ত্রী ফের সুস্থ জীবনে ফিরবেন, সে বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিচ্ছেন না।
ভুক্তভোগীর মেয়ে ফাহমিদা নাজনিন ফারিন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ওই ডাক্তারের কাছে সিজার করানো হয়। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা খারাপ আচরণ করে।
অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক চম্পা কণ্ডু বলেন, ওই রোগীর বাচ্চা প্রসবের সময় প্রস্রাবে অতিরিক্ত চাপ এবং মাসিক রাস্তায় বাচ্চা আটকে থাকায় এমনটা হতে পারে। অস্ত্রোপচারে কোনো ভুল হয়নি। বর্তমানে আমি উচ্চতর ডিগ্রি নিতে কুমিল্লা মেডিকেলে অধ্যয়নরত।
দাগনভূঁঞা আয়শা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের তুহিন বলেন, গত ৩০ জুন রাতে রোগী আসার পর চিকিৎসক চম্পা কুণ্ডকে খবর দেই। সেখানে ভুল হলে চিকিৎসক দায়ী।
ফেনীর সিভিল সার্জন রফিক উস সালেহীন বলেন, এ ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে গত ৩১ জুলাই একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।