স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনা সদর উপজেলায় বিনা নোটিশে ভেকু দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন দোকান ও বসতঘর ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠেছে কালিয়ারা গাবরাগাতী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের (৬০) বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদের সাথে দুই শতাংশ জায়গা নিয়ে গত কয়েক মাস আগে থেকে বিরোধ চলমান রয়েছে একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলেদের সাথে। বিরোধ পূর্ণ জায়গা নিয়ে আদালতে স্বত্ত্ব দখলীয় মামলাও চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় হঠাৎ করে শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ভেকু দিয়ে সীমানার প্রাচীর নির্মানের জন্য দোকান ও ঘর ভেঙে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের (পিআইও) মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা প্রাচীর ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সে কাজ গত জুন মাসে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় কাজটি বন্ধ থাকে। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছে টেষ্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বলছে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় কাজ করছেন। কোন প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধুম্রজাল।
অন্যদিকে দোকান ও বসতঘর ভাঙার দায়ে একই দিন দুপুরের দিকে ভূক্তভোগী একেএম শহীদুল ইসলাম খান বাদী হয়ে চেয়ারম্যানকে প্রধান ও অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২জনকে বিবাদী করে থানায় আভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার সাকের আহমেদ জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
বাদী একেএম শহীদুল ইসলাম খানের সাথে কথা বলে ও অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদীর বাবা ১৯৬৬ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ২৮ শতাংশ ক্রয়কৃত ভূমি তাদের ভোগ দখলে আছে। বাবার মৃত্যুর পর উত্তারিধকারভাবে ওই জায়গাটিতে ঘর নির্মাণ করে বাদীর ভোগ দখলে রয়েছে। আরএস ও এসএ খতিয়ান মোতাবেক স্বত্ত্ব দখলীয় থাকা জমির ২৮ শতাংশ হতে দুই শতাংশ জায়গা ভূলবসত ১৯৮২ সালের রেকর্ডে ইউনিয়ন পরিষদের নামে ওঠে পড়ে। এই বিষয়টা তিনিসহ তার ভাইদের জানা ছিল না। চলতি বছরের গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে দুই শতাংশ জায়গা দখল নিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মান করতে ব্যর্থ হন। দুই শতাংশ ভূমি নিয়ে সিআর মোকাদ্দমা নম্বর ৩১৫/২২ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
বাদী আরো জানায়, কোন প্রকার নোটিশ বা অবগত না করেই চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আজ (শুক্রবার) সকাল ৭টার দিকে ভেকু দিয়ে দোকান ও বসতঘরটি ভেঙে দিয়েছে। এতে তাদের ১০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
বিরোধপূর্ণ স্থানে কোন প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা ও প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করার এমন নিয়ম রয়েছে কিনা এবং জুন সমাপনীতে কাজ সম্পন্ন না করে বিল দেওয়া হয়েছে কিনা এসব বিষয়ে জানাতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বিরোধপূর্ণ জায়গায় কেন করবে। এ কাজের বিল ভাউচার বা টাকা দেওয়া হয় নাই। টেস্ট রিলফ (টিআর) থেকে বরাদ্দ। বন্যার কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ পেন্ডিং আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হিসাবে সেই টাকা জমা আছে। যতটুকু কাজ করবে সে অনুযায়ী বিল দেওয়ার কথা জানান তিনি।
বিনা নোটিশে কারো স্থাপনা ভাঙা যায় কিনা এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কার স্থাপনা ভেঙেছি আপনি বুঝলেন কেমনে। আলাপ আলোচনা করেই তো ভাঙছি।’ কোন প্রকল্পের আওতায় কাজ জানতে চাইলে বলেন,‘ কাবিখা প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হচ্ছে বলেই এটা কি আমার হাতের টাকার দিয়ে করছি না। সরকারি প্রকল্পের কাজ যখন যেটা দিয়া করা যায় সেটা দিয়ে করছি।’ একপর্যায়ে গত অর্থ বছরে নাকি চলতি অর্বথ ব্ছরের তা জিজ্ঞেস করলে ঔদ্ধ্যত্তপূর্ণ বচনে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি দুই ঘন্টা পরে ফোন দিতে বলেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা আক্তার জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।