অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা সংকট এতোটাই চরমে পৌঁছেছে যে, জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার বহু হাসপাতাল। ফলে সেবা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় ফিরছেন রোগীরা,
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম হাসপাতালে সব ওয়ার্ড অন্ধকার এবং প্রায় খালি। এই হাসপাতালে কিছু রোগী অবশিষ্ট থাকলেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এমনকি সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিৎসকরাও তাদের দায়িত্বপালনে হাসপাতালে আসতে বাধার মুখে পড়ছেন।
এএফপি বলছে, অসুস্থ রোগীদের মধ্যে যাদের কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা প্রয়োজন হয়, তাদেরই চিকিৎসা করে থাকে শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালটি এখন অনেক কম স্টাফ নিয়ে চলছে এবং হাসপাতালের ৩ হাজার ৪০০ শয্যার মধ্যে বহু এখন খালি পড়ে আছে।
সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং জীবন-রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া পেট্রলের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে রোগী এবং চিকিৎসকদের অনেকেই এখন হাসপাতালে আসতে পারছেন না।
শ্রীলঙ্কার সরকারি মেডিকেল অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. ভাসান রত্নসিংহাম এএফপিকে বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য নির্ধারিত যেসব রোগীর শিডিউল দেওয়া রয়েছে, তারা হাসপাতালে আসতে পারছেন না। কিছু মেডিক্যাল স্টাফ ডাবল শিফটে কাজ করছেন। কারণ অন্যরা ডিউটি করতে আসতে পারছেন না। তাদের গাড়ি আছে, কিন্তু জ্বালানি নেই।’
প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ৮৫ শতাংশই আমদানি করে শ্রীলঙ্কা। চাহিদার অবশিষ্ট ওষুধের কাঁচামাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামও আমদানি করে থাকে দেশটি। কিন্তু এই দ্বীপ দেশ এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত পেট্রল ও অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না।
এছাড়া ওষুধের সংকট থাকায় কম কার্যকর বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করার জন্যও তাদের বলা হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী হানা সিঙ্গার-হামডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার এক সময়ের শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে। সমাজের সবচেয়ে দুর্বলরা সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিনসহ জরুরি ওষুধের জন্য অর্থ সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ভারত, বাংলাদেশ, জাপান এবং অন্যান্য দেশ স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনুদান দিয়েও শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করেছে।
এর পাশাপাশি বিদেশে বসবাসরত লঙ্কানরা বাড়িতে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে সাহায্য করেছে। তবে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং শ্রীলঙ্কা হয়তো আরও খারাপ জনস্বাস্থ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি শ্রীলঙ্কায় খাদ্যপণ্যের দাম এত বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে যে অনেক পরিবার এখন নিজেদের খাবারের জন্য কার্যত লড়াই করছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের— মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়