তীব্র তাপদাহে পুড়ছে গোটা ইউরোপ। ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগালে শুরু হয়েছে দাবানল। শুক্রবার কবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। ইউরোপের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সামনের দিনগুলোতে আরও তাপদাহের আশঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছেন।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুটি দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এক হাজারের বেশি দমকল কর্মী। তীব্র তাপদাহের কবলে আগুন বাড়তে থাকায় পানি ছিটানো প্লেন ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে বেগে পেতে হচ্ছে তাদের।
পর্তুগালে তাপদাহ সামান্য কমলেও কয়েকটি স্থানে এখনও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াচ্ছে। পাঁচটি জেলায় চরম আবহাওয়া জনিত রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৩টি দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে এক হাজারের বেশি ফায়ারফাইটার।
পর্তুগালে গত ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ২৩৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ডিজিএস স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
আর ন্যাশনাল এপিডেমিওলজি সেন্টারের ডাটাবেস অনুসারে, স্পেনে তাপপ্রবাহের প্রথম তিন দিনে চরম তাপদাহের কারণে ৮৪ জনের মৃত্যুর নিবন্ধন করা হয়েছে।
স্পেনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১৭টি দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। তবে এই তাপপ্রবাহ মানুষের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর যে প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা। করোনার কারণে ইতোমধ্যে চাপে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাপপ্রবাহে নতুন করে শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) শুক্রবার বলেছে, তাপপ্রবাহে শহর ও নগরগুলোর বাতাসের মান আরও খারাপ হতে পারে।
ডব্লিউএমওর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লোরেনেজো লাব্রাডোর জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘স্থিতিশীল এবং স্থবির বায়ুমণ্ডল দূষণকারী কণা ও পদার্থ ঠেকাতে ঢাকনা হিসেবে কাজ করে। এর ফলে বাতাসের মান খারাপ হয়, স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর মানুষের ওপর’।
এদিকে, আগামী সোমবার এবং মঙ্গলবার ব্রিটেনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ইংল্যান্ডের কিছু অংশের জন্য প্রথমবারের মতো “চরম তাপমাত্রা”র রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। এই সময়ে দেশটিতে তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। যা “জাতীয় জরুরি” সতর্কতা স্তরকেই নির্দেশ করে।
ইউরোপের বেশিরভাগ অংশই মূলত একটি তাপপ্রবাহে দগ্ধ হচ্ছে, যা কিছু এর অঞ্চলের তাপমাত্রাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝামাঝিতে পৌঁছে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়াসহ শুষ্ক দেশগুলোজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে মেট অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ পল গুন্ডারসেন বলেন, “নিতান্তই ব্যতিক্রমী, সম্ভবত আগামী সপ্তাহের শুরুতে রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা হতে পারে।”
তিনি বলছিলেন, “এই সময়ের রাতগুলো ব্যতিক্রমীভাবে উষ্ণ হতে পারে, বিশেষ করে শহুরে এলাকায়। যা সাধারণ মানুষ এবং অবকাঠামোর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।” সূত্র: রয়টার্স