সাগর-মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। আজ ৮ জুন, আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- পুনরুজ্জীবন: মহাসাগরের জন্য যৌথ কর্ম- “Revitalization: Collective Action for the Ocean.”।
এই বছরের থিমের ফোকাস জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখতে সমুদ্রের ভূমিকার উপর। প্লাস্টিক আবর্জনা সাগরে ফেলা খুবই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ এটি সেখানকার জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সমুদ্রের বাসিন্দাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এই বছর বিশ্ব মহাসাগর দিবস উপলক্ষে, জাতিসংঘ প্রথম সংকর উদযাপনের আয়োজন করবে, যা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে ধরিত্রী সম্মেলনে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৩তম অধিবেশনে গৃহীত ১১১নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে দ্যা ওসেন প্রজেক্ট এবং ওয়ার্ল্ড ওসেন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতি বছরের ৮ জুন দিবসটি পলিত হচ্ছে।
মূলত ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ববাসী ৮ জুনকে পালন করে আসছে বিশ্ব মহাসাগর দিবস হিসেবে। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো, সাগর-মহাসাগর সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা।
সাগর-মহাসাগর হলো অক্সিজেনের বড় জোগানদাতা। পৃথিবীর তিন ভাগই পানি। মাত্র এক ভাগ স্থল। সমুদ্র ও উপকূলবর্তী এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত আজ বিপন্ন প্রায়। মহাসাগরগুলো বায়ুমণ্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে।
কিন্তু মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জলবায়ুর বৈরী থাবায় মহাসাগরগুলোর প্রতিবেশ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে এর জীববৈচিত্র্য। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
দিনটি শুধুমাত্র সম্মানের জন্যই নয়, আমাদের সমুদ্রের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য একটি অনন্য সুযোগ দেয়। জাতিসংঘের তথ্য থেকে জানা যায় যে মহাসাগর কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অক্সিজেন উত্পাদন করে এবং এটিকে ‘পৃথিবীর জীবনরেখা’ হিসাবেও অভিহিত করা হয়। মহাসাগরগুলি ৩০ শতাংশ এরও বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাবগুলি হ্রাস করে। তারা আমাদের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও পরিষেবাও তৈরি করে। জাতিসংঘের মতে, সমুদ্র বৈশ্বিক অর্থনীতির চাবিকাঠি এবং আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন লোক ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্র-ভিত্তিক শিল্পে নিযুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্ব মহাসাগর দিবস মানুষকে সমুদ্রের গুরুত্ব এবং দৈনন্দিন জীবনে তারা যে প্রধান ভূমিকা পালন করে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য স্মরণ করা হয়। জাতিসংঘের মতে, দিবসটি সমুদ্রের উপর মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের প্রজাতির জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী সমুদ্র এবং সম্পদের টেকসইতাকে উন্নীত করার জন্য সমুদ্র এবং এর সম্পদ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি সমুদ্র থেকে মানবজাতির উৎসারিত বিভিন্ন সম্পদ, সেইসাথে সমুদ্র যে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হয় তা তুলে ধরার উদ্দেশ্য।