স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগে পরীক্ষার্থীরা যে কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবেন, সেখানে পরীক্ষার্থীর পরিবার-পরিজন, নিকট আত্মীয়-স্বজন, তার পরিচিতজন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটিতে ও কক্ষে দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশনা রয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যকে পূর্বেই এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার নিয়মও রয়েছে। এমন নির্দেশনা ও অঙ্গীকারনামাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়েছেন এবং তার আওতাধীন কেন্দ্রের কক্ষে অংশনিয়েছেন তারই নিকট আত্মীয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রশ্নপত্রের ছবির তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষা কক্ষের বাহিরে প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে।
এমন ঘটনা নেত্রকোনা আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে ঘটে। পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য হলেন মো. নুরে আলম ফকির। তিনি ওই কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে সহকারি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। পরীক্ষার্থী মো. জহিরুল ইসলাম ফকির সম্পর্কে তারই আপন চাচাতো ভাই। তাদের বাড়ি জেলার আটপাড়া উপজেলায় পেয়াজকান্দি গ্রামে।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) গত শুক্রবার (২২ এপ্রিল) প্রাথমিক শিক্ষক পরীক্ষায় এবিষয়টি টের পেয়ে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হোসেনকে জানালে তিনি ওই পরীক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এনএসআই দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রকে ধরার জন্য নজরদারী চালান বলে জানা গেছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহেল রানা জানান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামালায় জহিরুল ইসলামকে শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। আর কেউ এর সাথে জড়িত কিনা তদন্ত কর দেখা হচ্ছে।
নাম না প্রকাশে একাধিকজনের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট হওয়ায় কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রমের সকল কমিটি ওই শিক্ষক (নুরে আলম) গঠন করেন এবং নিজেই সকল কমিটিতে থাকেন ও সুবিধাভোগ করেন। নিয়ম অনুযায়ি সিনিয়র শিক্ষক হবেন কলেজের প্রতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। কিন্তু সহকারি অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম প্রানিবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হলেও অধ্যক্ষের আস্থাভাজন থাকায় ওই শিক্ষক (নুরে আলম) বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পান।
এ বিষয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, একমাত্র প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ ব্যতিত নিয়মানুযায়ী কলেজের সকল বিভাগে প্রধান হয়েছেন সিনিয়র শিক্ষক। কমিটির মাধ্যমে রেজুলেশন করে সকল বিভাগের প্রধান নিয়োজিত হন। কিন্তু অধ্যক্ষ মনে হয় কমিটিকে ফাঁকি দিয়ে রেজুলেশন পাস করিয়েছেন। কমিটিকে মনে হয় এবিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। বিষয়টি কমিটির জানা থাকলে জুনিয়রকে বিভাগীয় প্রধান করা হতো না।
পরীক্ষার্থী আপন চাচাতো ভাই এর সত্যতা নিশ্চিত করে মো. নুরে আলম ফকির বলেন, সে এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী এটা আমার জানা ছিল না। পরিবার পরিজনসহ নিকট আত্মীয়-স্বজন আপনার কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নন- এই মর্মে অঙ্গীকারনামা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দিয়েছি কি-না মনে পড়ছে না।
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এব্যাপারে বলেন, নুরে আলম শহরে থাকেন। তার চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গ্রামের বাড়িতে থাকে। সে এই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে নুরে আলমের জানা ছিল না জেলা প্রশাসকসহ আমাদের সামনে স্বীকার করেছেন। প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে সিনিয়রের স্থলে জুনিয়র কিভাবে বিভাগীয় প্রধান হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ কি অভিযোগ দিয়েছে আপনার কাছে। মামলার কাজে থানায় ব্যস্ত আছি, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবাদুল্লাহ জানান, পরীক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পরিবার পরিজনসহ নিকট আত্মীয়-স্বজন পরীক্ষার্থী নন এই মর্মে অঙ্গীকারনামা দেয়ার বিধান রয়েছে।