পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার ক্ষমতার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
ইমরান খানের ভাগ্যেও কী তাই ঘটতে যাচ্ছে? এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
গত ৭৪ বছরে বিশৃঙ্খলা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অথবা সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন দেশটির সাবেক সব প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসা দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবার বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনা হয়েছে। বিরোধীদের এই অনাস্থা ভোট সোমবার জাতীয় পরিষদে অনুষ্ঠিত হবে।
ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম প্রধান মিত্র মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ায় ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার শঙ্কা জোরাল হয়েছে।
সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খান যদি ক্ষমতাচ্যুত হন, তাহলে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার যে কলঙ্কিত ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের, সেই ইতিহাসে যুক্ত হবে তার নামও।
মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন পাকিস্তানের যেসব প্রধানমন্ত্রী একনজরে জেনে নিন তাদের সম্পর্কে-
১. লিয়াকত আলী খান (গুপ্তহত্যার শিকার) – ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ থেকে ১৬ অক্টোবর ১৯৫১।
২. খাজা নাজিমুদ্দিন (গভর্নর জেনারেল কর্তৃক সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা) – ১৭ এপ্রিল ১৯৫৩ থেকে ১১ আগস্ট ১৯৫৫।
৩. চৌধুরী মোহাম্মদ আলী (পদত্যাগ করেন) – ১২ আগস্ট ১৯৫৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬।
৪. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি (পদত্যাগ করেন) – ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ থেকে ১৮ অক্টোবর ১৯৫৭।
৫. ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার (ক্ষমতাচ্যুত) – ১৮ অক্টোবর ১৯৫৭ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৫৭।
৬. ফিরোজ খান নূন (সামরিক শাসন জারির পর সরকারের পতন) ১৬ ডিসেম্বর ১৯৫৭ থেকে ৭ অক্টোবর ১৯৫৮।
৭. আইয়ুব খান (প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি) – ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
৮. নুরুল আমিন (পদত্যাগ করেন) – ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১।
৯. জুলফিকার আলী ভুট্টো- (নতুন সংবিধানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন) – ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত।
১০. জুলফিকার আলী ভুট্টো (জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হকের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত) ১৪ আগস্ট ১৯৭৩ থেকে ৫ জুলাই ১৯৭৭ পর্যন্ত।
১১. মুহাম্মদ খান জুনেজো (প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হকের ক্ষমতাচ্যুত করেন) ২৩ মার্চ ১৯৮৫ থেকে ২৯ মে ১৯৮৮ সাল।
১২. পাকিস্তানে ২৯ মে ১৯৮৮ থেকে ২ ডিসেম্বর ১৯৮৮ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য ছিল।
১৩. বেনজির ভুট্টো (সরকার ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান) – ২ ডিসেম্বর ১৯৮৮ থেকে ৬ আগস্ট ১৯৯০।
১৪. নওয়াজ শরিফ (প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান সরকার ভেঙে দেন) – ৬ নভেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৩।
১৫. প্রেসিডেন্ট খান নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে দেন। প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো হলে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করে। এপ্রিল ১৯৯৩ থেকে মে ১৯৯৩ সাল।
১৬. নওয়াজ শরিফ (পদত্যাগ করেন) – ২৬ মে ১৯৯৩ থেকে ১৮ জুলাই ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত।
১৭. বেনজির ভুট্টো (প্রেসিডেন্ট ফারুক লেঘারি সরকার ভেঙে দেন) – ১৯ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর ১৯৯৬।
১৮. নওয়াজ শরিফ (জেনারেল পারভেজ মুশাররফ নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত)- ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ থেকে ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ সাল।
১৯. অক্টোবর ১৯৯৯ থেকে নভেম্বর ২০০২ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য ছিল।
২০. জাফরুল্লাহ খান জামালি (পদত্যাগ করেন) – ২৩ নভেম্বর ২০০২ থেকে ২৬ জুন ২০০৪ সাল।
২১. চৌধুরী সুজাত হুসাইন (পদত্যাগ করেন) – ৩০ আগস্ট ২০০৪ থেকে ২৬ আগস্ট ২০০৪ সাল।
২২. শওকত আজিজ (পিএমএল-কিউ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ক্ষমতায় আসেন) ২৮ আগস্ট ২০০৪ থেকে ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সাল।
২৩. ইউসুফ রাজা গিলানি (সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করেন) – ২৫ মার্চ ২০০৮ থেকে ১৯ জুন ২০১২ সাল।
২৪. রাজা পারভেজ আশরাফ (পিপিপি সরকারের বাকি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন) – ২২ জুন ২০১২ থেকে ২৪ মার্চ ২০১৩ সাল।
২৫. নওয়াজ শরিফ (সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণা করেন) ৫ জুন ২০১৩ থেকে ২৮ জুন ২০১৭ সাল।
২৬. শহীদ খাকান আব্বাসি (পিএমএল-এন সরকারের বাকি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন) – ১ আগস্ট ২০১৭ থেকে ৩১ মে ২০১৮ সাল।
২৭. ইমরান খান – ১৮ আগস্ট ২০১৮ থেকে বর্তমান।