প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের হারানোর লক্ষ্যে মাঠে নামে টাইগাররা। সে লক্ষ্য পূরণে সাকিব-রাব্বির ১১৫ রানের জুটিতে ভর করে ৩১৫ রানের বড় স্কোর দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের জন্য বড় টার্গেটই দিল সফরকারীরা।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে থিতু হতে পারলে রান আসে আর ছোট মাঠ ও দ্রুতগতির আউটফিল্ড হওয়ায় রান হয় নিয়মিত। এসব কিছুর ফায়দা ঠিক মতোই আজ উঠিয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ ওভার শেষে ৭ উেইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের।
ইনিংসে তামিম-লিটন জুটিতে যেমন এসেছে রেকর্ড করা রান। তাদের রেকর্ডকে ভেঙে নতুন করে রেকর্ড সংখ্যক রানের জুটি করেছেন সাকিব-রাব্বি। প্রথম উইকেট জুটিতে ৯৫ ও চতুর্থ উইকেট জুটিতে সাকিব-রাব্বির ১১৫ রানের ওপর ভর করে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ করেছে তামিমরা।
ব্যাটে নেমে বেশ দেখে-শুনে শুরু করেন বাংলাদেশের দুই টপ অর্ডার ব্যাটার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ১০ ওভারে ৩ এর কিছুটা ওপরে গড়ে ৩৩ রান নিলেও পরের দশ ওভারে প্রায় ছয়ের কাছাকাছি গড় তুলেন তামিম ও লিটন । প্রথম উইকেট জুটি ভালো সূচনা এনে দেয় লাল-সবুজ দলের জন্য।
২১ দশমিক ৩ বল পর্যন্তু অবিচ্ছিন্ন থাকেন তামিম ও লিটন । দলীয় ৯৫ রানের মাথায় আউট হন তামিম। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি। সাকিব-রাব্বির জুটি না হলে এটি হতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ৪৬ ছিল সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি ছিল।
সেইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে কোন ফরম্যাটে টাইগারদের ওপেনিং জুটির সবচেয়ে বেশি সময় টিকে থাকারও রেকর্ড এটি। এর আগে সবচেয়ে বেশি সময় ওপেনিং জুটি টিকে ছিল ১১ দশমিক ১ বল পর্যন্ত।
অ্যান্ডিল ফেলুকায়োর বলে এলবিডব্লিউ শিকার বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।স্ট্যাম্পের দিকে যাওয়া বল খেলতে ব্যর্থ হন তামিম। পায়ে লাগলে ফেলুকায়োর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। স্পষ্ট উইকেট হিটিং বলেও রিভিউ নেওয়ায় নষ্ট হয় সেটা। দেশসেরা ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার ও একটি ছয়ের মার।
তামিম আউট হওয়ার পর ব্যাট হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। ২৩ তম ওভারের পঞ্চম বলে নিজের অর্ধশত রান পূর্ণ করেন তামিমকে শক্ত সঙ্গ দেওয়া লিটন । কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করার পরের বলেই কেশব মহারাজের বলে বোল্ড আউট হন দারুণ ফর্মে থাকা লিটন। ৬৭ বল থেকে ৫০ করার পথে ৫ টি চার ও ১ টি ছক্কান হাঁকান দাস।
লিটন আউট হওয়ার হলে মহারাজের পরের ওভারেই দ্বিতীয় শিকার হন মুশফিকুর রহিম। দলীয় স্কোর ১২৪ রানের মাথায় ১২ বলে মাত্র ৯ করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তখন ক্রীজে আসেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
এরপর যেন প্রোটিয়া বোলারদের ওপর চওড়া হতে শুরু করেন ওয়ান ডাউনে নামা সাকিব ও ইয়াসির আলি রাব্বি। এখান থেকে ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য আরো শক্তিশালী করেন সাকিব-রাব্বি। সাকিব যেন তার এই সিরিজে খেলা-না খেলা নিয়ে যতো সমালোচিত হয়েছেন সব এক ইনিংসে জবাব দিলেন।
অন্যদিকে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন রাব্বি। পাঁচ নম্বরে রাব্বিকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল। আর আজ সে সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগালেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি গড়েন সাকিব-রাব্বি। চতুর্থ উইকেটের এ জুটি মাত্র ৭২ বলেই করে একশোর বেশি রান। আর সব মিলিয়ে এ জুটি থেকে আসে ৮২ বলে ১১৫ রান। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭৭ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে আর রাব্বি দেখা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধ শতকের ।
দুইজন যেন যেভাবে খেলতে চেয়েছেন, সেভাবেই ব্যাটে লেগেছে বল। কখনও ওভার দ্য উইকেটে গিয়ে মেরেছেন আবার কখনও জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁকিয়েছেন বড় ছক্কার মার।
২১ থেকে ৩০ ওভারে ৬৫ রান আসে দলীয় স্কোরে আর ৩১ থেকে ৪০ এই দশ ওভারে আসে ৮৮ রান।
সাকিব যেন খেলেছেন টি- টুয়েন্টি গতিতে। ১২০ স্ট্রাইক রেটে ৭ চার ও ৩ ছক্কার মাধ্যমে ৬৪ বলে করেন ৭৭ রান।
দলের যখন অবস্থান শক্ত, তখনই ৪২ তম ওভারের পঞ্চম বলে লুঙ্গি এনগিডির কাছে এলবিডব্লিউ শিকার হন সাকিব। ২৩৯ মাথায় সাকিব আউট হওয়ার পরের ওভারেই ৪৩ বল থেকে ৫০ রান করেই লিটনকে অনুসরণ করেন রাব্বি। ৪৪ বলে দ্রুতগতিতে অর্ধশতক করেন তরুণ ব্যাটার। খেলেন ৪টি চার ও ২ টি ছয়ের মার।
রাব্বি আউট হলেও শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ ৯১ রান নিয়ে ফিনিশিংটা দিয়েছে দারুণ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৭ বলে ২৫, আফিফ হোসেন ধ্রুবর ১৩ বল থেকে ১৭ রান দলকে বড় সংগ্রহ করতে ভূমিকা রাখে।
সেইসাথে শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের যথাক্রমে ১৯ ও ৭ রান ছিল মূল্যবান ব্যক্তিগত ইনিংস।