এম এইচ রনি, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
চলতি মৌসুমে মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সারের ব্যাপক সংকটে বোরো আবাদে হতাশ জেলার ছয় উপজেলার কৃষকরা এমনি চিত্র দেখা গেছে।
সরজমিনে, জেলার কয়েকটি ডিলার পয়েন্টসহ ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, সৈয়দপুর, কিশোরীগঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা এমওপি সারের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কৃষক সার ছাড়াই বাড়ি ফিরেছেন। অন্যদিকে অনেক কৃষক স্থানীয় খুচরা বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনছেন।
জেলার সদর উপজেলার কালারডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে কৃষক ইয়াকুব আলী (৪৫) বলেন, এ মৌসুমে পটাশের বড় সংকট। এই সার বেশিরভাগই বোরো সহ প্রতিটি ফসলের আবাদে প্রয়োজন হয়। এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি, যেখানে পাঁচ বস্তা পটাশের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লড়াই করে মাত্র এক বস্তা সার সংগ্রহ করতে পেরেছি।
একই গ্রামের মৃত নেপাশু মামুদের ছেলে আরেক কৃষক আবু কবর সিদ্দিক (৪৮) বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পটাশ সার না পাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদে হতাশ হয়েছি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) নীলফামারী শাখার সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, গত বছর মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সার কেনার জন্য কোনো গ্রাহক না থাকলেও এ বছর জেলায় সারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সামান্য বরাদ্দ দিয়ে আমরা কৃষকদের দাবি পূরণ করতে পারছি না। এ কারনে হতাশ কৃষকরা এখন অননুমোদিত আউটলেট থেকে বেশি দাম দিয়ে সার কিনছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
প্রতিবেদককে বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, সরকার-অনুমোদিত আউটলেটের কর্মীরা অসাধু উপায়ে সার বিতরণ করছেন এবং সার সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে বিক্রি করছেন।তারা আরো জানান, সারাদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন জেলার আরও বেশ কয়েকজন কৃষক।
সার সংকটের কারণে জেলার কৃষকরা দ্বিগুণ দামেও বিএডিসি কর্তৃক সরবরাহকৃত সার সংগ্রহ করতে পারছে না এমনটি সর্বত্র লক্ষ্য করা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী অফিসের রেকর্ড অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নীলফামারী জেলার বিএডিসি ও বিসিআইসি ডিলারদের মধ্যে মোট ৪,৫৭৮ টন মিউরেট অফ পটাশ (MOP) সার বরাদ্দ করা হয়েছে।
এছাড়াও কৃষকরা ফসল ফলানোর জন্য বিভিন্ন সার ব্যবহার করছেন, তবে দুটি সবচেয়ে সাধারণ সার যেমন সালফেট অফ পটাশ (SOP) এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ (MOP)। সংকটের মুহূর্তে এমওপি সার সংগ্রহ করতে না পেরে জেলার অনেক কৃষক পটাশের বিকল্প সার হিসেবে বোরো ক্ষেতে রাইস মিলের ছাই ব্যবহার করছেন।