কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় যৌতুক না পেয়ে মৌ খাতুন (২২) নামে এক স্ত্রীকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী বকুল ইসলামের (৩৩) বিরুদ্ধে। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটার দিকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে গৃহবধূকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। কুষ্টিয়া পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লাহিনী বটতলা বাজারের পাশে মন্ডলপাড়ায় স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মৌ খাতুন সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা বাজারপাড়ার আব্দুর রশিদ মোল্লার মেয়ে। মৌ খাতুনের স্বামী বকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লাহিনী বটতলা বাজারের পাশে মন্ডলপাড়ার উকিল উদ্দিনের ছেলে। প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে মৌ খাতুনের সাথে বকুলের বিয়ে হয়। মোস্তাক নামের এক বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে তাদের।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় গৃহবধূ মৌ খাতুনকে মারধর করতেন স্বামী বকুল। মৌ এর বাবা একজন গরীব মানুষ। অভাবের সংসার হলেও মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে কয়েকবার জামাইয়ের যৌতুকের দাবি পূরণ করে মৌ এর বাবা। সর্বশেষ যৌতুকের টাকা না পেয়ে সোমবার মৌকে নির্মম নির্যাতন করেন তার স্বামী। হত্যার পর তাকে আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। স্থানীয়রা দুপুর ২টার দিকে ওই গৃহবধূকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহতের চাচাতো ভাই এনামুল হক বলেন, যৌতুকের দাবিতে আমার বোন মৌকে বিয়ের পর থেকেই নির্মমভাবে নির্যাতন করতো বকুল। অভাবের সংসার হলেও মৌ এর মুখের দিকে চেয়ে কয়েকবার যৌতুকের দাবি পূরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ যৌতুকের দাবি পূরনের অপারগতা প্রকাশ করলে সোমবার তাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বকুল। তারা হত্যার বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার জন্য বকুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশরাফুল আলম বলেন, দুপুরের দিকে হাসপাতালে আনার আগেই মৌ খাতুনের মৃত্যু হয়। মরদেহ মর্গে রয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০,১১,১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিল রিনা নাসরিন বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে ছিলাম। ওই গৃহবধূর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মর্গে এলাম। এখনও বিস্তারিত কিছু জানাতে পারিনি না।
মৌ খাতুনের স্বামী বকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। পারিবারিক কলহের জেরে আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। আমি তাকে হত্যা করিনি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।