মাদারীপুরের শিবচরে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিভিন্ন ধরনের অযুহাত ও করণিক ভুলত্রুটি মাধ্যমে প্রার্থিতা বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন।
উপেজলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদের এমন বেপরোয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকার ও অপসারণ চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী।
লিখিত অভিযোগ ও বিভিন্ন প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি হারুন-অর-রশিদ মাদারীপুরের শিবচরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে। তিনি যোগদানের পরে গত তিন বছরে শিবচরে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। বর্তমানে শিবচরে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচনেও হারুন-অর-রশিদ বিভিন্ন প্রার্থিদের কাছ থেকে কৌশলে মনোনয়ন পত্রে ভুলত্রুটি, করণিক ভুল, ভোটার তালিকার সিডির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। তার এমন বেপরোয়া অনিয়মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উমেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আঃ লতিফ মুন্সী।
লিখিত অভিযোগপত্র থেকে আরো জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ নির্ধারিত মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে শুরু করে প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে প্রার্থীদের কাছে থেকে ঘুষ গ্রহণ করছেন। মনোনয়ন ফরম বৈধ সত্ত্বেও অধিকাংশ প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম বাতিলের ভয় দেখিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে তার চাহিদা মত টাকা আদায় করছে। এছাড়া সরকার কর্তৃক ভোটার তালিকার সিডি বাবাদ ৫’শ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও প্রত্যেক প্রার্থীদের কাছ থেকে ভোটার তালিকার সিডি সরবরাহের জন্য অতিক্তি ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার কাগজপত্র প্রদানে গড়িমসি করে। এছাড়া ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র দায়িত্বপালনকারী প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদেরকে পছন্দমত কেন্দ্রে নিয়োগের কথা বলে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক প্রার্থী তাদের মনোনয়ন বাতিল হলে এলাকায় সেই প্রার্থীর ভোটারদের কাছে সম্মানহানির হাত থেকে বাঁচতে নির্বাচন কর্মকর্তার চাহিদামত টাকা প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে অভিযোগ করা হয়।
উমেদপুরের আরেকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার মুন্সী বলেন, ‘এই নির্বাচন কর্মকর্তার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যর কারণে শিবচরের নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে তাকে অপসারণ করা না হলে সে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এতে যদি, নির্বাচনকালে জনগণের জানমাল ও জীবনের কোন ক্ষতি হয় তাহলে ওই নির্বাচন কর্মকর্তাও সেটি এড়িয়ে যেতে পারবে না বলে জানান এই প্রার্থী।
সন্নাসীরচর ইউনিয়নের চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘আমার কাছ থেকে সিডির জন্য ৫’হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া আমি অফিসের স্টাফদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিয়েছি। এই বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না বলেও তিনি জানান।’
তবে, ভদ্রাসন ইউনিয়নের আনারস মার্কার প্রার্থী নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রউফ শিকদার বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ভোটার তালিকার সিডি বাবদ মাত্র ৫’শ টাকা নিয়েছে। তার কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়নি।’-তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো কয়েকজন ইউপি মেম্বার প্রার্থীও নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হয়েছে। তারা বলেন, এই কর্মকর্তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যাবে না।’
এদিকে সন্নাসীরচর ইউনিয়নের ঘোড়া মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রউফ হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিবচর নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টুকটাক কিছু অভিযোগ তো আছেই। এই বিষয়ে আপনাকে আমি পরে ফোন দেব। পরে কথা বলবো।’
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শিবচর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুণ-অর-রশিদের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য অভিযোগ পেয়েছি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার বিরুদ্ধে প্রার্থীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এই বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘শিবচরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
উল্লেখ্য, ‘আগামী চতুর্থ ধাপে ২৬ ডিসেম্বর শিবচরের ৩ টি ইউনিয়নে এবং ৫ জানুয়ারি ২ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’