তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ভোরের আলো ফোঁটার আগেই জেগে ওঠে পাড়াটি। পরিবারের সদস্যরা মিলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ডালের বড়া তৈরির কাজে। কেউ ব্যস্ত চাল-ডাল ধুঁয়ে পরিস্কার করার কাজে, কেউবা চাল-ডাল মেশিনে গুড়া তৈরিতে। আবার কেউবা ব্যস্ত হাতের মুষ্ঠিতে চেপে চেপে বিশেষ কায়দায় বড়া তৈরি করে রোদে শুকাতে। বলছি গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামার বোয়ালী গ্রামের সাহাপাড়ার কথা।
সাহাপাড়ার প্রায় ১৫-২০টি পরিবার কয়েক দশক ধরে এই ডালের বড়া তৈরির কাজ করে আসছেন। অনেকের বাড়তি আয়ের অন্যতম উৎস এই কাজ; আবার কেউ বংশ পরম্পরায় একমাত্র পেশা হিসেবে নিয়েছেন। অন্যান্য মৌসুমে বড়া তৈরি হলেও শীতের দু’তিন মাস দম ফেলার উপায় নেই কারিগরদের। শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ব্যস্ততা বাড়ে এই সময়।
শীতের সকালে বাড়ির পাশের ফাঁকা জমিতে স্ত্রী, স্কুল পড়–য়া মেয়ে আর বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে ডালের বড়া তৈরি করছিলেন ওই গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্র মোহন্ত। কথা হয় তাদের সঙ্গে। বলছিলেন, ডালের বড়া তৈরির উপকরণ খুব একটা বেশি নয়। প্রথমে মাসকলাই আর চাল ধুয়ে পরিস্কার করে নিতে হয়। এরপর সেগুলো মিশিয়ে মেশিনে গুড়া করা হয়। আগে মেশিন না থাকায় যাঁতায় করে হাত দিয়ে গুড়ো করতে হতো। তবে এখন মেশিন আসায় সহজেই হচ্ছে এই কাজ। চাল-ডাল গুড়া করার পর ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপরই হাতের মুষ্ঠিতে চেপে চেপে বিশেষ কায়দায় পরিস্কার কাপড়ের ওপর বড়া রাখা হয়। সবশেষে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য তৈরি হয় ডালের বড়া।
ওই গ্রামের দিপালী রাণী সারা মৌসুমেও ব্যস্ত থাকেন বড়া তৈরির কাজে। তিনি বলেন, বড়া তৈরি মূলত রোদের ওপর নির্ভর্শীল। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কষ্ট বাড়ে। অনেক সময় তৈরি করা বড়া রোদের অভাবে নষ্টও হয়ে যায়।
বড়া তৈরির আরেক কারিগর অখিল চন্দ্র সাহা জানান, প্রতিটি পরিবার দিনে ১০ কেজি পর্যন্ত এই বড়া তৈরি করতে পারেন। প্রতি কেজি ডালের বড়া তৈরি করতে খরচ পড়ে ১৫০ টাকা। কিন্তু তারা বিক্রি করেন ২০০-২৫০ টাকা প্রতি কেজি।
সময়ের ব্যবধানে চাল-ডালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমেছে। তারপরও বংশ পরম্পরায় শত কষ্টেও বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখার কথা জানান কারিগররা।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা বিসিকের সহকারি মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, বড়া তৈরির কারিগরদের বড়া বাজারজাতকরণ, ঋণসুবিধাসহ যেকোন প্রয়োজনে সহায়তা দেয়া হবে। তিনি বলেন, সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দু’লাখ টাকা পর্যন্ত সহজ শর্তে ঋণসুবিধা চালু আছে। বড়া তৈরির কারিগররা একজন গ্যারান্টার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সহজেই আবেদন করতে পারবেন।