যশোর, ০৬ ডিসেম্বর – ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দু’দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের পর রোববার রাত থেকে যশোরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার যা দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে।
এদিকে টানা বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। বৃষ্টিতে কৃষকের পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি দীর্ঘ হলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
যশোর আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিজড় জাওয়াদের প্রভাবে শনিবার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টির গতি বেড়েছে। মঙ্গলবারও আবহাওয়া একই থাকবে। ৮ ডিসেম্বর থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।
এদিন জেলায় সবোর্চ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিলো ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গতকালও দেশের সর্ব্বোচ্চ বৃষ্টিপাত যশোরে ছিলো ২৭ মিলিমিটার। এছাড়া দেশে সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা ওইদিন রেকর্ড করা হয় টেকনাফে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বোনিম্ন তেঁতুলিয়া ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়বে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সকাল থেকে খেটে খাওয়া মানুষকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ভ্যানচালক জামাল আহম্মেদ বলেন, গত দুদিন ধরে বৃষ্টি ও শীতের কারণে ভ্যান চালাতে পারিনি, রোজগারও নেই। কোনো আয় না থাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।
একই এলাকার রওশনারা বেগম বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারণে আমাদের টিনের ঘরে বসবাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে কাটা ধান ভিজে আনেক ক্ষতি হয়েছে।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, দুদিন আগে ১২ কাটা জমির আমন ধান কেটে রেখেছি। কিন্তু দুদিন ধরে বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে গেল। এই বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
সদরের চুড়ামনকাটির কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, এবার তিনি আড়াই বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ধান কাটা হয়ে গেছে। বিচালি রক্ষার জন্য মাচা করা হয়েছে। তবে মাঠের সবজির ক্ষতি হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর জেলার কৃষকরা তাদের আমন ধান ঘরে নেওয়া শেষ পর্যায়ে। এই বৃষ্টিতে আমন ধান ঘরে তুলতে বৃষ্টি কিছুটা বাগড়া দিয়েছে। যদি এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে ধানের কিছুটা ক্ষতি হবে। সেই সঙ্গে শীতকালিন সবজি, মসুর ও সরিষার ক্ষতি হবে। এতে কৃষিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারি অপু জানান, বৃষ্টির পানি যাতে পৌর এলাকায় না জমে সেজন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment