কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : মুহাম্মদ রেজাউল হক টিটু ওরফে রেজা ভান্ডারী (৪৮) তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারী আবার কখনো এনএসআই এর কর্মকর্তা। আটকের পরে পরিচয় দিলেন তিনি বাউল শিল্পী ও সিএনএন অনলাইন এর সাংবাদিক। এসব পরিচয় বহন করে তিনি নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাত জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এসব টাকা ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্ট এবং হাতে নগদের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে জানা গেছে।
ভূক্তভোগী একজনের কাছে সন্দেহ হলে দলের মূল হোতা রেজাউল হক টিটুকে বৃহস্পতিবার রাতে আটক করে নেত্রকোনা পৌরশহরে পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ভূক্তভোগীরাা পরে তাকে নেত্রকোনার মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে দিলে এ চক্রের আরো দুই সদস্যকে আটক করে থানা পুলিশ।
রেজাউল হক টিটু চাপাইনবাবগঞ্জের শিবপুর থানাধীন সাতরশিয়া বিশ্বাসপাড়ার মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে। ঢাকায় তার বাসা হাজারীবাগে রায়েরবাজার এলাকায় টালি অফিস রোডে বাসা নং-৮/১, ইমু হাউজে ৪র্থ তলায়।
আটক অন্য দুজন হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গলধাপাড়া এলাকার মৃত আ. হেকিমের ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (৪৯) ও নেত্রকোনা পৌরশহরের কাটলী এলাকা আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু সায়েম (২৭)। আবু সায়েম এচক্রের সাথে জড়িত হলেও তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন পদের জন্য ১০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকাও দিয়েছেন মূল হোতা টিটুকে।
জানা যায়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি পদের মধ্যে একটি পদে এক ভূক্তভোগীর কাছে ডাক যোগে চাকুরির নিয়োগ পত্র আসে। এক চিঠিতে একটি ওই বিশ^বিদ্যালয়ের প্যাডে ও আরেকটি নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের প্যাডে দুই নিয়োগপত্র দেখতে পান ভূক্তভোগী। বিষয়টি সন্দেহ হলে ভূক্তভোগী অর্থ লেনদেনকারী টিটুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রিপন জানান, এ বিষয়ে জানতে পারি সায়েম নামে একজন সে আমার এলাকার। সে চাকুরির জন্য বেশ কিছু অর্থ লেনদেন করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত নামে জনসংযোগ কর্মকর্তা জানতে পারেন সায়েম একটি চক্রের খপ্পরে ধরা খেয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হক বিষয়টি আমাকে ফোনে জানায়, সায়াম কোথায় আছে তাকে নিয়ে দেখা করার জন্য। সায়েমের লোকেশন ও সে প্রতারনার শিকার হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সায়েমকে ফোন দেই।
দুই মিনিট পরে ফোন আসে। পরিচয় দিল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারী। পরে আমার পরিচয় দিলে তিনি বলেন ঢাকায় গেলে যেন তার সাথে চা পান করি। তখন পর্যন্ত আমি জানি না তিনি টিটু। এর পরপরই জানতে পারি রেজাউল হক টিটু ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আটক হয়েছে। আমার নেত্রীর প্রেস সেক্রেটারীর মিথ্যে পরিচয় দেয়া শুনে আমি ওখানে যায়। তাকে আটকে সহায়তার করার পেছনেও আমার হাত রয়েছে। আমার নেত্রীর মিথ্যে পরিচয় দেয়ার জন্য টিটুর বিরুদ্ধে নিজেই অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, ভূক্তভোগীদের কারো কাছ থেকে জানতে পারি রেজাউল হক টিটু এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, আবার কারো কাছে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। পুলিশ হেফাজতে তিনি বাউল শিল্পী ও সিএনএন অনলাইনের সাংবাদিক পরিচয় দেন। তিনি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের প্যাডে নিয়োগপত্র ও বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাহিদা পত্রও দিয়েছে ভূক্তভোগীদের। এসব কাগজপত্র ও এঘটনা অধিকতর তদন্তের বিষয়। আটককৃত তিনজনকে শুক্রবার (১ অক্টোবর) আদালতে প্রেরণ করা হবে।