এটা একেবারে অভিনব নয়। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। বিরোধীরা যখন নির্বাচন বর্জন করে এমন দৃশ্যপট তৈরি হয়। ২০১৪ সালে তো রীতিমতো রেকর্ডই হলো। ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হলেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ নিয়ে নানা আলোচনা, বিতর্ক। কিন্তু অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
কিন্তু এবারে একেবারে ভিন্ন এক রেকর্ড হতে চলেছে। সাড়ে চার হাজার ইউপিতে নির্বাচন হবে কয়েক দফায়। এরমধ্যে এ দফার ১৬০টির মধ্যে ৪৫টিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া। বলা বাহুল্য তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নয়টি পৌরসভার মধ্যে তিনটির একই পরিণতি হয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে দেশে। এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। মূলত এ কারণেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। অনেকটা অটোপাসের মতোই পাস করে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। যেসব ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে সেখানেও খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে এমনটা নয়। ফল আগেই অনুমেয়। নিবন্ধন হারানো জামায়াতও নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে বহুদিন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এমনকি সংসদের উপ-নির্বাচনগুলোতেও এ দলের প্রার্থীরা কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে সরে যাচ্ছেন। সহযোগী দৈনিক প্রথম আলো’তে খবর বের হয়েছে, মূলত সুযোগ-সুবিধা নিয়েই দলটির প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এটা একধরনের পরিস্থিতি। এবারও ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন কিছু জায়গায়। অতীতে দেখা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে অনেক জায়গাতেই সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে যে, বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ কারণে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাও প্রার্থী হতে সাহস করেননি। বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চান এমন অনেক নেতাকে প্রার্থীরা নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিবৃত করেছেন।
ইউপি নির্বাচনগুলোতে অতীতে অনেক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রার্থী হতেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভোটের পরিবেশ দেখে ধীরে ধীরে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের কোনো না কোনো পর্যায়ের সমর্থন ছাড়া ভোটের ময়দানে যে শেষ পর্যন্ত টেকা যাবে না তা তারা অনেকটাই বুঝে গেছেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যেমন গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষ জেনে গেছে যে দিনশেষে জয়ী হবেন সরকারদলীয় প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনে অংশ নেয়াকে প-শ্রম ও অর্থের অপচয় মনে করেন অনেকে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ অবশ্য পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করেছেন আরেকটু এগিয়ে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, সরকারতো বলছে মানুষ শান্তিতে আছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। দেশের ভবিষ্যৎ ভালো। আমি মনে করি এমন দেশে নির্বাচন না হলেও সমস্যা নেই। কারণ দেশে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে এই ধরনের নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোনো দরকার নেই।
করোনকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে সারা দুনিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাতেই অটোপাসের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও পাবলিক পরীক্ষায় অটোপাস দেয়া হয়েছে। যদিও দেড় বছরের বেশি সময় পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির বিশেষ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনেও চলছে অটোপাস। অথচ স্থানীয় নির্বাচনগুলো হতে পারতো উৎসব। যেটা গণতন্ত্রেরই দাবি।