রবিবার কাবুল দখল করে আফগান প্রশাসনের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠী। শুধু সন্ত্রাসেই নয়, আধুনিক জীবনযাপনেও হাত পাকাচ্ছে তারা। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই সব ছাপিয়ে একটাই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। এবার থেকে আফগানিস্তান শাসন করবে তালেবান, কিন্তু দেশ চালানোর মতো এত অর্থ হাতে আসবে কোথা থেকে? ‘ভয়েস অফ আমেরিকার’ রিপোর্ট অনুযায়ী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, তালেবানরা ঠিক কত টাকা জোগাড় করতে পেরেছে তা সঠিকভাবে অনুমান করা অসম্ভব। তবে বিশেষ সূত্রে খবর, এক বছরে ৩০০ মিলিয়ন থেকে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন অর্থ তাদের ঝুলিতে এসেছে। একটা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কোষাগার কীসে ফুলেফেঁপে উঠছে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে চোখ প্রায় কপালে ওঠার জোগাড়। এতদিন জানা ছিল, মাদক পাচার, তোলাবাজি করেই নিজেদের খরচ জোগাড় করে নিজেরা। কিন্তু ২০২১ সালে জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। বিশ্বের ১০টি জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে সম্পদশালী হিসেবে তালেবানের স্থান পঞ্চম। শীর্ষে রয়েছে ISIS। তাদের বার্ষিক আয় ২ বিলিয়ন ডলার।
আর তালেবানের বার্ষিক আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের আশেপাশে। গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, শুধুমাত্র মাদক পাচারের ফলে তালেবানের কোষাগারে এসেছে ৪৬০ মিলিয়ন ডলার। দ্য ইউএন রিপোর্ট বলছে , খননকাজ, মাদক পাচার, বিদেশি ত্রাণ, রপ্তানি, ট্যাক্স, রিয়েল এস্টেট – এই ছটি ক্ষেত্র থেকে অর্থ রোজগার করে। সবচেয়ে বেশি আয় হয় খনন কাজ আর মাদক পাচার থেকে। আর এই অর্থেই ফুলেফেঁপে উঠেছে তালেবানের কোষাগার। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং খনি থেকে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর কোষাগারে এসেছে ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার। তালেবান নেতারা অনুদান থেকেও ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে , বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ধনী সমর্থকদের কাছ থেকেও তাদের কোষাগারে অর্থ এসেছে । এরই মধ্যে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে কয়েক বছর ধরে তালেবান রাশিয়া থেকে অর্থ, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ২০১৮ সালে অগাস্ট মাসে VOA – কে একটি ইমেইলে আফগানিস্তানের তৎকালীন মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জন নিকলসন জানিয়েছিলেন তালেবানদের কাছে সাহায্য আসছে মস্কো থেকে। অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানরা পাকিস্তান এবং ইরানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। আফগানিস্তানকে জোর করে নেওয়ার জন্য তালেবানরা যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, আফগানিস্তান শাসনের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে কি তাদের হাতে? বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আফগান সরকার ২০১৮ সালে ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যার মধ্যে ৮০% এসেছে বিদেশী সাহায্য থেকে । আফগানিস্তানে শাসন চালাতে তালেবানরাও বৈদেশিক সাহায্যের গুরুত্বের কথা বিলক্ষণ জানে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন মহাপরিদর্শক জন সোপকো। তবে
বিল রোগিও-র মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , তালেবান আন্তর্জাতিক সাহায্য, আন্তর্জাতিক বৈধতা সম্পর্কে চিন্তা করে না । তাদের লক্ষ্য একটাই নিজেদের আইন -কানুন স্থাপন করা। জঙ্গিদলে যোগ দেওয়ার জন্য যদি দারিদ্র্যকে দায়ি করা হয়, তাহলে এখন যে সেই প্রেক্ষাপট বদলেছে, তা স্পষ্ট। তালেবানের অন্দরে আর দারিদ্র্য নেই। ধনী থেকে ধনীতর হচ্ছে।পুরনো অস্ত্রের বদলে এখন তাদের হাতে ঝকঝকে পশ্চিমী অস্ত্র, পরনে ঐতিহ্যবাহী পোশাকই, তবে তা নতুন। পুরনো আমলের গাড়ির বদলে তাদের হাতে এখন ঝাঁ চকচকে সব গাড়ির স্টিয়ারিং । ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির কাউন্টার টেররিজম প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাথু লেভিট বলছেন, সরকারি দফতরে কব্জা করার পর ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভল্টেও তাদের অবারিত হস্তক্ষেপ শুরু হবে , সরকারি বিভিন্ন একাউন্ট নিয়েও তারা নাড়াচাড়া করবে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও তাদের উগ্রবাদী, কট্টর মানসিকতায় যে আদতে কোনও বদল আসেনি তা এই জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যকলাপের স্পষ্ট।