জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন পূরণ করাটাই একটা দায়িত্ব এবং সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ফ্ল্যাট এবং বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত স্বল্প ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল আনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর সরকারি কলোনি, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন মালিবাগ এবং মতিঝিলে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ৩০০টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, অনুষ্ঠানে মাদারীপুরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবন ও উদ্বোধন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন পূলণ করাটাই একটা দায়িত্ব এবং সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি। কারণ, তিনি যেভাবে চিন্তা করেছেন তার থেকে ভাল চিন্তা আর কেউ করতে পারে না। আমি তাঁর বড় মেয়ে হিসেবে সবসময় তাঁর কাছে একথা শুনেছি। তিনি বলেছেন, কিভাবে বাংলাদেশকে সাজাতে চান।
এই আগস্ট মাসে বস্তির মানুষগুলো যে থাকার একটা সুন্দর জায়গা পাবে এটিই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ, যে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবেন। আমরা মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি।
কিন্তু আমি জানি জাতির পিতা বেঁচে থাকলে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই দেশের মানুষ উন্নত জীবন পেত। প্রত্যেকটি গ্রাম এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উন্নত হতো। কাজেই, সে কাজটাই আমরা এখন করে যাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কয়েকজন বস্তিবাসীর মাঝে ফ্লাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন।
প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাড়ে তিন বছর একটা রাষ্ট্রের জন্য কম সময়। তখন তো একটা প্রদেশ ছিল, সেটা দেশে উন্নীত করা ও তা গড়ে তোলা, এটা তিনি করে গেছেন। কিছু বেইমান-মুনাফেকের জন্য তার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।
জাতির পিতা প্রত্যেকটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করেন। জেলা গভর্ণর নিয়োগ দেন, যাতে প্রত্যেকটি জায়গা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু, ৭৫-এর পর এ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
সকলের জন্য সুষ্ঠু আবাসন নিশ্চিত করতে এবং এক ছাদের নিচে সরকারি সব সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। যাতে এক জায়গা থেকে সব সেবা পাওয়া যায়। পরে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন করে দিয়েছি। এখন মাদারীপুরে জেলায় কমপ্লেক্স করে দিলাম। এক ছাদের নিচে সব সরকারি সেবা পাবে মানুষ। সব জেলা ও উপজেলায় কমপ্লেক্স করে দেব। অফিসারদের থাকার জন্য ও ফ্ল্যাট করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা ক্ষমতায় এবং একটাই চিন্তা, সেট হল, একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং তাদের সুস্থ ও উন্নত জীবন দেয়া। যে মৌলিক চাহিদার কথা সংবিধানে বলা আছে তা পূরণ করা।
যে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে তার কাজ তাদের জীবন মান উন্নত করাকেও কর্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের নিয়ে আমরা কাজ করাবো, তাদের ভালো-মন্দও তো দেখতে হবে। কাজেই, আমি সরকার গঠন করে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সকলকে ফ্ল্যাট করে দেব। সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেব, যাতে কর্মকর্তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।
এক সময় আজিমপুর সরকারি কলোনিতে গ্যাস না থাকায় তা দেয়ার এবং তিন তলা ভবনগুলো চারতলা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর সরকার ঘরে ফেরা কর্মসূচি পূনরায় নতুন উদ্যোমে শুরু করতে যাচ্ছে, যাতে বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে নিজ বাড়িতে থেকে দরিদ্র ভাসমান মানুষ কিছু করে খেতে পারেন-প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে অনেক বস্তি, গ্রামের ঘর-বাড়ি ছেড়ে এই বস্তি জীবনের কারণ অনুসন্ধানে তিনি ’৯৬ পরবর্তী সরকারে এসে বস্তিবাসী অনেক ছেলে-মেয়েকে গণভবনে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং বস্তিবাসী যারা ফিরে যেতে চান তাদের জন্য ঘরে ফেরার কর্মসূচি নেন।
একজন বস্তিবাসী নিজ গ্রামে ফিরলে তার ভিটেমাটি থাকলে সেখানে বিনে পয়সায় ঘর-বাড়ি তৈরী করে দেয়া, তাকে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া এবং ছয় মাসের খাবার বিনে পয়সায় দেয়া-সে কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত ছিল।
যে কারণে ’৯৬ পরবর্তী সরকারে এসেই হরিজন ও দলিত শ্রেনীর জন্য ফ্য¬াট নির্মাণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের বস্তিবাসীদেরর জন্য ভাসানটেকে ফ্ল্যাট নির্মাণ শুরু করেন। যা পরবর্তী বিএনপি সরকার এসে লুটপাট করে খায়। ফলে, ২০০৯ সালে সরকারে এসে আবার নতুনভাবে সেই কাজ শুরু করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ৩০০ পরিবারকে ৩০০ ফ্ল্যাট দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ফ্ল্যাট দেব। তবে, বস্তিতে যেমন ভাড়া দিয়ে থাকেন তেমনি ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। সেটা মাসিক, সাপ্তাহিক এবং দৈনিক-যার যেমন সুুবিধা সেভাবে হতে পারে। আর কেউ গ্রামে যেতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করবো। গ্রামের ঘরবাড়ি করে দেব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং ছয় মাসের খাবারও বিনামূল্যে পাবেন।
এ সময় তিনি বলেন, পূর্বাচলে যাদের জমির মালিকানা ছিল, তাদের একটা করে প্লট করে দেয়ার কথা ছিল। সেটা কেউ করেনি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নামমাত্র মূল্যে তাদের প্লটগুলো দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়