করোনাকালীন সময়ে চলমান অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২.৭ ভাগ শিক্ষার্থী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, ৪৬.৭ ভাগ শিক্ষার্থী এ নিয়ে অসন্তুষ্ট বলে মতামত দিয়েছেন। তবে অনলাইন ক্লাস নিয়ে অসন্তুষ্টির পাল্লা ভারি হলেও শতকরা ৫২.৭ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের ‘সোশ্যাল সায়েন্স টিম’ পরিচালিত একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ টি অনুষদ ও ইন্সটিটিউটসমূহের মোট ৩৭৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গত ১ জুন থেকে ১৫ জুন এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, সমাপ্ত হওয়া অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে অসন্তুষ্টির পাল্লাই ভারি। অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে শতকরা ২৩.১ জন শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট ও ২৩.৩ জন শিক্ষার্থী খুব বেশি অসন্তুষ্ট বলে মত প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ২৩.৯ জন শিক্ষার্থী মোটামুটি সন্তুষ্ট, এবং মাত্র ২.৭ জন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে সন্তুষ্ট বলে মতামত দিয়েছেন।
অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ হয়েছে কিনা, জরিপে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ৪৬.৩ ভাগ শিক্ষার্থী ‘হ্যাঁ’ এবং ৫৩.৭ ভাগ শিক্ষার্থী ‘না’ উত্তর দিয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৫.৮ ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল ও ১১.৭ ভাগ ল্যাপটপের মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৬৪.১ ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল ডেটা, ৩৩ ভাগ ওয়াইফাই, ২.২ ভাগ ব্রডব্যান্ড এবং কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল ডেটা ও ওয়াইফাই উভয়ই দুটোই ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেন।
অনলাইন পরীক্ষা দিতে চান ৫২.৭ ভাগ শিক্ষার্থী
জরিপে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিনা জানতে চাওয়া হলে ৫২.৭ ভাগ শিক্ষার্থী ইচ্ছুক, ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থী ইচ্ছুক নন এবং বাকিরা এখনো নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন। ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৭.৪ ভাগ এসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। এছাড়াও অনেকেই ওপেন বুক, এমসিকিউ, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর বা বড় প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র ৪.২ ভাগ শিক্ষার্থী লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যারা ইচ্ছুক নন তারা কারণ হিসেবে গ্রামের বাড়িতে ভালো নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকা (৫৭.৪%), বিদ্যুতের সমস্যা (৩৮.১%), বাড়িতে পরীক্ষা দেয়ার বা প্রস্তুতি নেয়ার পরিবেশ না থাকা (৪৫.৮%), প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা (২২.২%), ডিভাইস বা ডেটা কেনার সামর্থ না থাকা (১৬.৬%), পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে সন্দিহান থাকা (৫৭.৪%), অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা না থাকা (৪০.৬%) এবং প্রস্তুতি না থাকাকে (২৭.৩%) তুলে ধরেছেন। তাদের মধ্যে ৫২.৩% শিক্ষার্থী স্বশরীরে পরীক্ষার হলে বসতে আগ্রহী এবং ১৭.১% শিক্ষার্থী অটো প্রমোশনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এছাড়াও, ডিভাইস বা আর্থিক সহায়তার জন্য বিভাগ বা ইন্সটিটিউটে আবেদন করে সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ৩.৪ ভাগ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, ২৬.৪ ভাগ শিক্ষার্থী আবেদন করেও এখনো সহায়তা পাননি এবং অবশিষ্ট ৬৭.৫ ভাগ শিক্ষার্থী নিজে থেকেই আবেদন করেননি।
গবেষণায় সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধায়ন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মঞ্জুরুল করিম ও কমিউনেকশন ডিসঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ-এর সোস্যাল সায়েন্স টিম’-এর মো. তানবীরুল ইসলাম (টিম ম্যানেজার), সুমাইয়া ইমতিয়াজ (কো অর্ডিনেটর), মোঃ আতিকুজ্জামান, জাওয়াদ সামস, রাগীব আনজুম, মো. ওমর ফারুক ও সুমাইয়া আহমেদ। গবেষণা প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ ও পুনর্বিন্যাসে সহযোগিতা করেছেন নাসরিন জেবিন, সাইফুল্লাহ সাদেক, শাহরিন ফারাহ খান এবং ইসতিয়াক উদ্দিন।