আবদুল হান্নান, ভোলা :
ভোলার নদীতে মিলছে না ইলিশ। জীবনের প্রয়োজনে মাছ শিকারে গেলে চারটি, সাতটি, সর্বোচ্চ দুই হালি করে পাচ্ছে ইলিশ তবে প্রায় খালি হাতেই
নদী থেকে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের।
মেঘনার নদীতে ইলিশশূন্য থাকায় ভোলার হাজার হাজার জেলে ঘাটে বসেই বেকার সময় কাটাচ্ছে।
এতে তেল খরচ এবং ৭-১৫ জন মাঝি মাল্লার খরচ পোষায় না। দেনা দাদন করে নদীতে নামতে হয়েছে তা আর ফিরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না মহাজনদের। এতে হতশায় দিশেহারা জেলেপল্লীতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীতে তেমন একটা ইলিশ নেই। জেলেরা নদীতে সারাদিন পড়ে থেকেও নৌকার জ্বালানি খরচ পর্যন্ত উঠাতে পারছেন না।
ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা,রাজাপুর,বিশ্বরোড,সোনাডুগি,
জোরখাল, নাদের মিয়ার মাছ ঘাটগুলো কয়েকটি জেলেপল্লী ঘুরে কথা হয় জেলেদের সাথে।
দলু মাঝি, শহিদ,রিয়াজ,কামাল, সবুজ, দুলাল মাঝি সহ বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, নদীতে যে পরিমাণ মাছ থাকার কথা তা একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে মাছ না থাকায় সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।এখন আমরা দেনা,দাদন নিয়ে হতশায় জীবনযাপন করছি।
জেলেরা জানান, গেল বছরও এদিনে নৌকা ভরে ইলিশ নিয়ে ফিরেছেন। সবার দৈনিক খরচ পোষাতো। আর এ বছর নদীতে কোন মাছ নেই। গভীর সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিললেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যেতে পারে না ক্ষুদ্র জেলেরা।
আর কিছু দিন পর কোরবানির ঈদ।
ঈদে পরিবার নিয়ে একটু আনন্দে খুশিতে কাটাতে চাই সবাই।
কিন্তু মেঘনা নদীতে এ বছর ইলিশশূন্য। মেঘনা নদীতেই তাদের ভরসা।এ মেঘনাতেই জীবিকা নির্বাহ করে তাদের বেঁচে থাকা।
তাই ভরা মৌসুমে মাছ না পাওয়ায় জেলে পাড়ায় চলছে হাহাকার। সব জেলেই কোনো না কোনো ভাবে দেনাগ্রস্ত।শত দেনা থাকলেও আশা থাকে নদীতে নৌকা ভরে ইলিশ শিকার করবে। সেই ইলিশ বিক্রি করে পরিবার, সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে সুখে কাটবে ইলিশ মৌসুমটুকু। কিন্তু এখনো জেলেদের মুখে হাসি নেই।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণেই নদ-নদীতে মাছ আসছে না।
নদীতে ইলিশসহ সব মাছেরই দেখা মিলছে না। আবহওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন ঘটলে নদীতে মাছে দেখে মিলবে। তাই জেলেদেরকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ মৎস্য বিভাগের।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক ও ইলিশ গবেষকরা জানান,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে দেরি হচ্ছে।গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার বৃষ্টিপাত সবচেয়ে কম হয়েছে। এর ফলে ইলিশ মাছের পরিমানও কম। বৃষ্টি শুরু হলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
জেলেদের দাবি করোনা এই পরিস্থিতিতে তাদের এই দুর্দিনে সরকার যদি কিছু সাহায্য করে তাহলে আমাদের কিছুটা কষ্ট দূর হতো।