তানভীর আহমেদ (তাহিরপুর) :
“এই অভাবের সংসার আর ভালো লাগে না”। “গরিব বলে কেউ কোনো খুঁজ খবর নেয় না ” বাবা হয়েও আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছি না! জীবিত থেকে এর চেয়ে আর বড় কষ্ট কী হতে পারে? বৃদ্ধ বয়সে কোনো উপার্জনও করতে পারি না! চিকিৎসা করাইমু কি দিয়া? জমিজমা থাকলে না বিক্রি করে চিকিৎসা করাইতাম সন্তানের, তাও নাই। কি করমু এই জীবন দিয়া? “কেউ যদি রক্ত কিনতো রক্তই বিক্রি করতাম সন্তানের চিকিৎসার টাকার জন্য”। এছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই, এসব কথা গুলো এ প্রতিবেদক কে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলেছেন সাখাওয়াতের বৃদ্ধ পিতা ‘মালিক মিয়া’।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গরিব ও অসহায় পরিবারের ছেলে সাখাওয়াত (২৪) । পেশায় একজন মৎস্যজীবী। সাখাওয়াতের বাবাও বৃদ্ধ বয়সী। অভাব অনটনের মধ্যে পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো ব্যাক্তি না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে আসছেন সাখাওয়াতের পরিবার। সাখাওয়াতেই ছিলো সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থতায় ভুগছে সাখাওয়াত। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় চিকিৎসার কোনো সুযোগ হয়ে উঠেনি তার। কিছু দিন পূর্বে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সামান্য পরিমান সাহায্য উত্তোলন করে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না থাকার ফলে সম্পূর্ণ চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয় সাখাওয়াতের পরিবার। বর্তামানে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তার পরিবারের কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসছে না। সাহায্যও করছে না কোনো ব্যক্তি বা সুশিল সমাজ। যার ফলে ধোঁকে ধোঁকে বাবার সামনেই মরছে সাখাওয়াত।
“সাখাওয়াত” সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার ২নং শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউপি’র সুলেমানপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।
সাখাওয়াতের চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জানা যায়, সাখাওয়াতের কিছুদিন পূর্বে মাথায় টিউমার হয়েছিল। পরে তারা সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকায় কোনো ভাবে শুধু ব্রেইন টিউমার অপারেশন করেই তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে তার পরিবার। ব্রেইন টিউমার অপারেশন করার পর বাড়ি ফিরলেও সুস্থ হয় নি সাখাওয়াত। সম্পূর্ণ ভাবে ভালো হয় নি ব্রেইন টিউমারের ক্ষত। পরিবারের সদস্যরা বলছে, সাখাওয়াতের বর্তমানে এক হাত ও এক পা অবশ (নারা চরা করতে পারে না) হয়ে আছে। সাখাওয়াত কে বাঁচাতে হলে পূর্ণ চিকিৎসা করতে হবে।
সাখাওয়াতের পরিবারের দাবী, চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার বা আর্থিক সচ্ছল যে কোনো ব্যক্তি যেন নেয়।
সাখাওয়াতের বৃদ্ধা বাবা ‘মালিক মিয়া’ বলেন, গ্রামের মানুষের কাছ থেকে সায় সাহায্য করে পঞ্চাশ হাজার টাকা উত্তোলন করেছিলাম,সেই টাকা দিয়েই ব্রেইন টিউমার অপারেশন করাই সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখন ছেলেটা সুস্থ না হওয়ায় আবার চিকিৎসা করাতে হবে। বর্তমানে কথাও বলতে পারে না সে। হাতে নেই টাকা। কি করে জোগাড় করি চিকিৎসার টাকা। কতদিন যাবো মানুষের কাছে। আগামী কাল যে ভাত কাইমু সেই টাকাও নাই। সেটা গ্রাম বাসীও জানে। এখন আমি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশ-বিদেশের অবস্থানরত সকল ভাই বোনদের সহযোগীতা কামনা করছি। আপনাদের সহযোগিতাই পারে আমার সন্তানের চিকিৎসা করাতে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুুরী বাবুল বলেন, উপজেলা পরিষদে মানবিক ফান্ড না থাকায় উপজেলা পরিষদ থেকে সাহায্য করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি আমি দেখবো অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য করা যায় কিনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি, চিকিৎসার জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা করার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আমি পার্সোনাল ভাবে তাকে চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ দেওয়া ব্যবস্থা করতেছি