দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা বৃটেনে সম্পত্তির এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। সব মিলে লন্ডন, স্কটল্যান্ড এবং নিউমার্কেট এলাকায় তার আছে ৪০ হাজার হেক্টরেরও (এক লাখ একর) বেশি সম্পত্তি। বৃটেনের অনলাইন গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এর ফলে বৃটেনে সবচেয়ে বেশি জমির মালিকদের অন্যতম হয়ে উঠেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ম্যানসন, স্ট্যাবল, নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে অশ্ব প্রশিক্ষণের স্থান, লন্ডনের সবচেয়ে এক্সক্লুসিভ এলাকায় আছে বেশ কয়েকটি সাদা রঙের বাড়ি, বিস্তৃত জলাভূমি। এর মধ্যে রয়েছে স্কটিশ হাইল্যান্ডে ৩৫ হাজার হেক্টরের ইনভারিনেট এস্টেট। গার্ডিয়ান তার অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে এসব বিলাসবহুল হোল্ডিংয়ের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত শেখ মোহাম্মদ। তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান ব্যবহার করেছে ল্যান্ড রেজিস্ট্রি রেকর্ড এবং কোম্পানি ফাইলিংস।
তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ সম্পত্তির মালিক তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। কারণ, তার নামের সঙ্গে জড়িত যেসব সম্পত্তি তার বেশির ভাগই অফসোর কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে তিনি মালিক। এর মধ্যে রয়েছে জার্নসে এবং জারসি’তে। এর ফলে বৃটেনে তার গোপন সম্পদের প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যখন এসব সম্পত্তি বিক্রি করে দেবেন তখন বৃটেনের ট্যাক্স এড়ানোর পন্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে কিনা।
শেখ মোহাম্মদের একজন আইনজীবী এসব সম্পত্তি বা কোম্পানির মালিকানা বা বিস্তারিত নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার আর্থিক বিষয়আশয় ব্যক্তিগত এবং গোপনীয়। এসব সম্পত্তি অফসোর কোম্পানির মাধ্যমে কিনেছেন শেখ মোহাম্মদ। ফলে এগুলোর মালিক তিনি অথবা বৃটেনের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে এসব করা হয়েছে- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই আইনজীবী।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে গার্ডিয়ান। তাতে দেখা গেছে শেখ মোহাম্মদ কমপক্ষে ৪০ হাজার হেক্টর সম্পত্তির মালিক। এর মধ্য দিয়ে তিনি বৃটেনে শক্তি ও প্রভাব বিস্তারের একটি সূত্র হয়ে উঠেছেন। এছাড়া বৃটেনে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক এমন পরিবারের একজন হয়ে উঠেছেন তিনি। জমির মালিকানা বিষয়ক শীর্ষ স্থানীয় বিশেষজ্ঞ গাই শ্রুবসোলের মতে, এর মধ্য দিয়ে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত এস্টেটের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছেন। সারে’তে আছে শেখ মোহাম্মদের ৭ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের লংক্রস এস্টেট। এই এস্টেট তিনি কিনেছেন ১৯৭৬ সালে। এখানবার বাসভবন থেকে তার মেয়ে প্রিন্সেস শামসা তার ২১ বছরের নিয়ন্ত্রণ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। গত বছর হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, প্রিন্সেস শামসাকে অপহরণ করে কেমব্রিজে নিয়ে গিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ। এটি কেমব্রিজে তার আরেকটি সম্পত্তি। এটি নিউমার্কেট এলাকায়। একে ডালহ্যাম হল বলেও ডাকা হয়। এরপর সেখান থেকে প্রিন্সেস শামসাকে ফিরিয়ে নেয়া হয় দুবাইয়ে। সেখানে তাকে বন্দি করে রেখেছেন তিনি। ওই সময়ে এবং রায় ঘোষণার সময় থেকে দেখা যায়, প্রিন্সেস শামসার ছোটবোন প্রিন্সেস লতিফাকে অপহরণ করেন শেখ মোহাম্মদ। তারপর থেকে তাকে ২০০২ সালে দুবাইয়ে আটকে রাখেন। ২০১৮ সালে তিনি নিজের বৃটিশ সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়াতে থাকেন।
রায় ঘোষণার তিন মাস পরে জুনে সেই একই জার্নসে নামের নিবন্ধিত কোম্পানি, যারা লংক্রস, স্মেচ প্রপার্টির মালিক, তারা উডহে কিনে নেয়। এটি সারে’তে এক বিশাল ম্যানসন। তারা এটাকে এক কোটি ৩০ লাখ পাউন্ডে কিনে নেয়। এর ব্রোসিউর অনুযায়ী, এখানে রয়েছে ১০টি বিলাসবহুল বেডরুম, কয়েকটি লিভিংরুম, বিনোদনের কক্ষ, একটি সিনেমা হল, সুইমিং পুল/বলরুম। অ্যাসকট থেকে এর দূরত্ব চার মাইল। এর আয়তন ১০ হেক্টর।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment