মোঃ মহিবুল, পাথরঘাটা উপজেলা প্রতিনিধিঃ
উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটায় চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে চারপাশ। ভোরের আলো ফুটলেও কুয়াশার কারণে সড়কে দৃশ্যমানতা নেমে এসেছে কয়েক মিটারে। শীতের এই তীব্রতায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল করছে সতর্কতার সঙ্গে। দূর থেকে আসা মোটরসাইকেল ও যানবাহনের হেডলাইটই জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি।
কুয়াশার কারণে ঝুঁকি এড়াতে অনেক চালক গতি কমিয়ে চলাচল করছেন, ফলে কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে ধীরগতি। শীত ও কুয়াশার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের ওপর। দিনমজুর, ভ্যানচালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কাজের অভাবে পড়েছেন বিপাকে। সড়কের পাশে থাকা অস্থায়ী দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা কম, অনেক দোকানই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। ভ্যানচালক মোঃ খলিল মিয়া বলেন, ‘শীত এমন পড়ছে যে ভোরে ঘর থেকে বের হওয়াই মুশকিল।
কাজ না করলে পরিবার চলবে না, আবার শরীরও মানে না।’ স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েকদিন ধরেই শীতের প্রকোপ বাড়ছে। উত্তরে ঠান্ডা বাতাস, ভোর ও রাতের দিকে কুয়াশা এতটাই ঘন হয় যে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে কষ্টকর। শীত নিবারণের জন্য অনেককে আগুন পোহাতে ও গরম কাপড়ের খোঁজ করতে দেখা গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়া, যানবাহন চালানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন এবং শীত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সব মিলিয়ে, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত জনজীবনে এনেছে স্থবিরতা, বাড়িয়েছে দুর্ভোগ—শীতের এই নীরব বাস্তবতা এখন সবার চোখে স্পষ্ট। স্থানীয় গৃহবধূ রেনু বেগম বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। শীত বাড়লে জ্বর-সর্দি লেগেই থাকে।
এদিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, “শীতার্ত মানুষের কষ্ট আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাথরঘাটা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় নিচে নেমে যাওয়ায় ঠান্ডার তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশি। আগামী কয়েকদিন রাত ও ভোরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। কুয়াশা ও শীতের প্রভাব অব্যাহত থাকবে। শীতের এই তীব্রতায় পাথরঘাটার জনজীবন যেন থমকে গিয়েছে, উষ্ণতার খোঁজে মানুষের চোখ খোলা মার্কেট আর সহানুভূতির দিকে।
