নিজস্ব প্রতিবেদক: বিজয় একাত্তর সাহিত্য পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন ও কবি সম্মাননা অনুষ্ঠানে কবি ও চিন্তক এনামূল হক পলাশেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকালে নেত্রকোনা পৌরশহরে মোক্তারপাড়স্থ আর্য গৃহে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘নেত্রকোনা আবৃত্তি নিকেতন’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কবি সাইফুন্নাহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মোড়ক উন্মোচন ও কবি সম্মাননা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিজয় একাত্তর সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও ‘নেত্রকোনা আবৃত্তি নিকেতনে’র প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ননী গোপাল সরকার।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, বিশিষ্ট ছড়াকার ও সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ পিন্টু, কবি কামাল হোসাইন, চারণ কবি মুকলেছ উদ্দিন।
প্রফেসর ননী গোপাল সরকার বলেন, লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কবি এনামূল হক পলাশ যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, তাতে জনগণের সংস্কৃতি পুনঃনির্মাণ করতে সাহায্য করবে। আমরা তাকে সম্মানিত করতে পেরে আনন্দিত।
নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতা আছে। কবি এনামূল হক পলাশ একজন শক্তিমান লেখক। তিনি এই পদক বা সম্মাননা পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
কবি কামাল হোসাইন বলেন, কবি এনামূল হক পলাশকে না দেখলে তার বিশাল কর্মযজ্ঞ অনুভব করা সম্ভব হবে না। ‘নেত্রকোনা আবৃত্তি নিকেতন’ তাকে খুঁজে বের করে সম্মানিত করায় একটি ভালো কাজ হয়েছে। আমরা উভয়ের জন্য শুভকামনা জানাই।
এনামূল হক পলাশ তার বক্তব্যে বলেন, এই ভূখণ্ড বহুমাত্রিক কালচারাল স্পেস নিয়ে টিকে আছে। কর্তৃত্ববাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে সকল প্রকার সংস্কৃতির ঐক্য এই অঞ্চলে স্থির আছে। কর্তৃত্ববাদ ও আধিপত্যবাদের পক্ষের সব সংস্কৃতি আপনা আপনি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই আমরা একথা বলতেই পারি যে, স্বাধীন ঢাকা হচ্ছে প্রতীকী অর্থে বাংলাভাষীদের সাংস্কৃতিক কেবলা, সেই কেবলা’র মূল উপাদান জীবিত আছে পূর্ব্ব-মৈমনসিংহে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণের সংস্কৃতির মূল কেবলা হচ্ছে পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ অর্থাৎ হাল আমলের নেত্রকোনা জেলা ও কিশোরগঞ্জের অংশবিশেষ।
মোড়ক উন্মোচন ও কবি সম্মাননা অনুষ্ঠানের পর উপস্থিত লেখক ও শ্রোতাদের বিজয় একাত্তর সাহিত্য পত্রিকার ৫ম বর্ষের এগারো তম সংখ্যা বিতরণ করা হয়। পরে কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর আব্দুস সালাম, নেত্রকোনা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি কনক পন্ডিত, নেত্রকোনা সংস্কৃতি মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক খন্দকার অলিউল্লাহ, কবি কল্পনা ঘোষ, কবি রীমি ফেরদৌসী, কবি দেলোয়ার হোসেন মাসুদ, কবি পহেলি দে, গোপালকৃষ্ণ সরকার, ফয়জুল হাসান কবির, সাংবাদিক তানভীর হায়াত খান, সাংবাদিক আব্দুর রহমান, সুস্থির সরকার, এস এস শুভ্র, এম এ হান্নান, পারভেজ কামাল, মৌরি জলি, প্রকৃতি সরকার, তৃষ্ণা তালুকদার, দীপাবলি দত্ত রায়, পরিতোষ সরকার, আনোয়ারুল ইসলাম, শামীম তালুকদার সহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, নেত্রকোনা আবৃত্তি নিকেতন প্রতি বছর একজন কবিকে অর্থমূল্যসহ সম্মাননা প্রদান করে। এবছরের সংবর্ধিত কবি এনামূল হক পলাশ বাংলা ভাষার সহজিয়া ধারার একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি, ভাবুক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, শিশু সাহিত্যিক ও গীতিকার। তিনি বামপন্থী বিপ্লবী রাজনৈতিক ধারার একজন কর্মী ছিলেন। তিনি অন্তরাশ্রম নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং একই নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা করেন। ২০২৪ সালের জুলাই গনঅভ্যুত্থানের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে তিনি ছিলেন একজন সামনের সারির যোদ্ধা। সম্প্রতি তিনি জনগণের ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব নিয়ে কাজ করে একজন আলোচিত ব্যাক্তিত্ব।
