ইমন সরকার, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন এখানকার রাজনীতি কেবল পোস্টার, ব্যানার কিংবা স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই জনপদের রাজনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবন, দুঃখ–কষ্ট, আশা–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। ঠিক এই বাস্তবতার ভেতরেই সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন যুবনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া যার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন এখন স্থানীয় রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এক সময় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতা, আর আজ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সম্মানের সঙ্গে নিজ অবস্থানে প্রত্যাবর্তন জিয়ার এই ফিরে আসা কেবল একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়; এটি রাজনীতিতে ধৈর্য, ন্যায়বোধ ও আত্মসমালোচনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রায় এক বছর আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সংগঠনের নীতি–আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। অনেকের রাজনীতি এখানেই থেমে যায়। কিন্তু জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা থামেনি। অভিযোগের পরপরই জিয়া বিষয়টিকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য বা দলবিরোধী অবস্থানে যাননি। বরং দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন, লিখিত ব্যাখ্যা ও ধৈর্যের সঙ্গে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করেছেন যা বর্তমান রাজনীতিতে বিরল এক উদাহরণ। তার আবেদন পাওয়ার পর যুবদল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অভিযোগের খতিয়ান, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামত এবং জিয়ার লিখিত বক্তব্য গভীরভাবে পর্যালোচনা করে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয় যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ডিসেম্বর রাতে যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। পরে সহ–দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
এর ফলে জিয়াউর রহমান জিয়া পুনরায় ফিরে পান তার প্রাথমিক সদস্যপদসহ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য এবং ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদ। হবিরবাড়ী ইউনিয়নে জিয়াকে নিয়ে একটি পরিচিত কথা প্রচলিত আছে সেটা হচ্ছে “তিনি রাজনীতি করেন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে।” স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গরিব ও অসহায় মানুষের চিকিৎসা সহায়তা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান, কর্মহীন পরিবারে খাদ্য সহায়তা কিংবা হঠাৎ বিপদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাশে দাঁড়ানো এসব কাজে জিয়াকে বহুবার নীরবে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।
জামিরদিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ূম মিয়া বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেক নেতা আসে–যায়। কিন্তু বিপদে যাকে ফোন দিলে পাওয়া যায়, তিনি হচ্ছেন জিয়া ভাই। তিনি নেতা হওয়ার আগে একজন মানুষ।” এই মানবিক গ্রহণযোগ্যতাই বহিষ্কারের কঠিন সময়েও তাকে মাঠের কর্মীদের হৃদয় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয়নি। জিয়ার পুনর্বহালে হবিরবাড়ী ইউনিয়ন ও ভালুকা উপজেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ও নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
হবিরবাড়ী ইউনিয়ন যুবদল নেতা খান অন্তর বলেন, “জিয়া দাদা মাঠের কর্মীদের নেতা। তিনি ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং সংগঠনের জন্য একটি বড় সম্পদ। তার ফিরে আসায় সংগঠনে নতুন গতি ও ঐক্য সৃষ্টি হবে।” দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার পর জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, “দলের প্রতি আমার অঙ্গীকার ছিল, আছে এবং থাকবে। যে আস্থা ও সম্মান আমাকে দেওয়া হয়েছে, তা আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শৃঙ্খলা মেনে দলের জন্য আরও দৃঢ়ভাবে কাজ করবো।”
এই বক্তব্যে ছিল না কোনো অভিযোগ, ছিল না আত্মপক্ষ সমর্থনের তাড়াহুড়া ছিল একজন পরিণত রাজনৈতিক কর্মীর দায়িত্ববোধ ও সংযম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জিয়ার সক্রিয় মাঠরাজনীতি হবিরবাড়ী ইউনিয়নে যুবদলের সাংগঠনিক শক্তি, নেতৃত্বের ভারসাম্য এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে যা আগামী দিনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। হবিরবাড়ীর রাজনীতিতে তাই আজ জিয়াউর রহমান জিয়া শুধু একটি নাম নন তিনি হয়ে উঠছেন আস্থা, দায়িত্ব এবং সম্ভাবনার প্রতীক।
